আ’লীগের তৃণমূলে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৬ নভেম্বর, ২০২২, 11:41 AM
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৬ নভেম্বর, ২০২২, 11:41 AM
আ’লীগের তৃণমূলে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনের আগে দ্বন্দ্ব, বিভেদ ভুলে তৃণমূল আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ পরাজিত করতে পারবে না। নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের ঐক্য অটুট রাখতে জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে গণভবনে বৈঠকে বসেন আওয়ামী লীগের সভাপতি। দুপুর পৌনে ১টায় শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ চেয়েছিলেন তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতারা। তারই অংশ হিসেবে গত তিন বছর পর এই প্রথম তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া বৈঠকে সিলেট, নেত্রকোনা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, কুমিল্লা ও শরিয়তপুর জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, দলের সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ৩ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের সম্মেলন না করার সিদ্ধান্ত দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি রাষ্ট্রীয় সফরে জাপান যাবেন ২৯ নভেম্বর। ফিরবেন ৩ ডিসেম্বর। সে কারণে সম্মেলনের তারিখ পরিবর্তন করতে নিদের্শনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে নতুন তারিখ নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে পরামর্শ করার নিদের্শনা দেন শেখ হাসিনা।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। তারা দীর্ঘদিন প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি সাক্ষাৎ না পেয়ে প্রায় তিন বছর পর গণভবনে আসতে পেরে নিজেদের খুশির কথাও জানান। এসময় তৃণমূলের ঐক্য আওয়ামী লীগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জেলা উপজেলার নেতাদের বলেন, সব দ্বন্দ্ব ও সংঘাত লে দলের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থেকে ভুলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে মোকাবিলা করতে হবে। চলমান বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে। দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটিতে উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে। দেশের কোথাও যেন কেউ খাদ্য মজুদ করতে না পারে, সে বিষয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন দলীয় সভাপতি। একই সঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যেন আন্দোলন সংগ্রামের নামে সাধারণ মানুষের জানমালের কোনো ক্ষতি করতে না পারে সেদিকেও তৃণমূল আওয়ামী লীগকে সজাগ দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান বৈঠকে উপস্থিত জেলা নেতারা।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শরিয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছাবেদুর রহমান খোকা সিকদার। তিনি বলেন, আমরা অনেক আগে থেকেই নেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ চেয়েছিলাম। এরই প্রেক্ষিতে তিনি আমাদের ডেকেছেন। তার সঙ্গে দীর্ঘদিন পর দেখা হয়েছে। আমরা খুশি হয়েছি। তিনি আমার জেলার সাংগঠনিক প্রেক্ষাপট জানতে চেয়েছেন। সব কিছু খুলে বলেছি। তবে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন, সংগঠনের মধ্যে যেন কোনো বিভেদ না থাকে। সামনে নির্বাচন। এই নির্বাচনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এছাড়া সরকারের যেসব উন্নয়ন হয়েছে, সেগুলো নিয়ে মানুষের দোড়গোড়ায় যেতে হবে।
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, সবার আবেগ ও অনুভূতি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা ব্যক্ত করেছি। সাংগঠনিক অবস্থা দলীয় সভাপতি জানতে চেয়েছেন। আমরা সেটি জানিয়েছি। তবে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, যে কোনো মূল্যে নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। কোনো দ্বন্দ্ব ও বিভেদ দেখতে চাই না। সামনে নির্বাচন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আমাদের ভোট দেবে। তাই কোনোভাবেই যেন জনগণের কাছে খারাপ কিছু না পৌঁছায়। আমরা যেন জনগণের কাছে পৌঁছে সরকারের উন্নয়নগুলো তুলে ধরি। কারণ, ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সবাইকে কাজ করতে হবে।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের অধ্যাপক সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন বলেন, আমাদের কাছে সাংগঠনিক অবস্থা জানতে চেয়েছেন নেত্রী। আমরা বিস্তারিত তুলে ধরেছি। তবে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন, আওয়ামী লীগকে যেন সুসংগঠিত রাখি। কোনো ধরণের যেন দ্বন্দ্ব না থাকে। আমরাও বলেছি, কোনো নিজেদের মধ্যে কোনো কোন্দল থাকবে না।
সিলেটে সম্প্রতি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে- এ ব্যাপারে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী আপনাদের কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার এলাকায় কোনো কোন্দল নেই। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, তৃণমূল আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন। কে কি পেলাম, সেটি না ভেবে দলকে সংগঠিত করতে বলেছেন। সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করবে। সেই সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সাবইকে দ্বন্দ্ব ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছেন। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমার জেলায় কোনো দ্বন্দ্ব নেই। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছি।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক বলেন, দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন। সব দ্বন্দ্ব ভুলে আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করতে হবে। জনগণের কাছে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরতে হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়যুক্ত হলে আগামীতে উন্নয়নের ধারা সম্ভব হবে।
নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান খান বলেন, নেত্রী আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে বলেছেন। তৃণমূলে যেন কোনো কোন্দল না থাকে। তিনি জেলার সাংগঠনিক অবস্থা জানতে চেয়েছেন। আমরা সাংগঠনিক অবস্থার কথা বিস্তারিত বলেছি।