এডিপি অনুমোদনের জন্য এনইসিতে উঠছে আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৭ মে, ২০২২, 11:37 AM
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৭ মে, ২০২২, 11:37 AM
এডিপি অনুমোদনের জন্য এনইসিতে উঠছে আজ
আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় উঠতে যাচ্ছে আজ। এর আগে পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় এডিপির আকার চূড়ান্ত করা হয়।
প্রস্তাবিত এডিপিতে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে যোগাযোগ খাতে। এছাড়া সরকারের অগ্রাধিকার পাওয়া বঙ্গবন্ধু রেলসেতুসহ ৯ মেগা প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ ৩৭ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্যই বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৩ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ বাড়ছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা।
চলতি বছর পদ্মা সেতুসহ বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে থাকা তিন মেগা প্রকল্প জনগণের জন্য চালু করতে যাচ্ছে সরকার। প্রকল্পগুলোর কাজ ঠিকভাবে এগিয়ে নিতে প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চালু হওয়ার কথা রয়েছে রাজধানীর আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের একাংশ। অক্টোবরে চালু হওয়ার কথা কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল। আর মাত্র এক মাস পরে জুনেই উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।
মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে আগামী অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ প্রকল্পে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১৪ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ২ হাজার ২০২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর এ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। পরে সংশোধনীতে বরাদ্দ কমিয়ে করা হয় ২ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ২ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। চলতি বছরের শুরুতে এ প্রকল্পে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও আরএডিপিতে বরাদ্দ কমিয়ে ৪ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছিল। পদ্মা রেলসেতু প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার ৮০০ কেটি টাকা।
বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্প আগামী অর্থবছরে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ১ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৬ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। চলতি বছর এ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৬ হাজার ৩০০ কেটি টাকা। দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার রেল প্রকল্পে এবার ১২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। আর মেগা প্রকল্পের বাইরে আরও একটি বড় প্রকল্প বঙ্গবন্ধু রেলসেতু। আগামী বছর এ প্রকল্পে বরাদ্দ থাকছে ৩ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। আর পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরে দুটি চলমান প্রকল্পে যথাক্রমে ৫১৩ কোটি টাকা ও ২৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। গত ১১ মে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রায় ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকার এডিপির প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়। বরাদ্দের এ পরিমাণ চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির বরাদ্দের চেয়ে ২০ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা, যা পরে সংশোধন করা হয়। আর নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বরাদ্দের তুলনায় ৩৮ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা বা প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি।
প্রস্তাবিত এডিপির অর্থায়নে দেশি সম্পদ থেকে জোগান দেওয়া হবে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৬২ শতাংশ। আর ৯৩ হাজার কোটি টাকা প্রায় ৩৮ শতাংশ বৈদেশিক অর্থায়ন পাওয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছে। গত কয়েক বছরের মতো এবারও এডিপিতে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে যোগাযোগ খাতে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির চেয়ে বরাদ্দ বাড়ছে প্রায় ২১ শতাংশ। এ বিপুল অর্থ সড়ক, রেল, আকাশপথসহ যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারে ব্যয় করা হবে।
জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের এডিপিতে খাতওয়ারি বরাদ্দের মধ্যে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭০ হাজার ৬৯৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৯ হাজার ৪১২ কোটি টাকা, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৮১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা; যা মোট বরাদ্দের প্রায় ১২ শতাংশ। গৃহায়ন ও গণপূর্তে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৪ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য খাতের জন্য প্রায় ১৯ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা, স্থানীয় সরকার খাতের জন্য ১৬ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা, কৃষি খাতে ১০ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা; পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ খাতে ৯ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা; শিল্প খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ৫ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা এবং বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য বরাদ্দ ৪ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা।
নতুন এডিপির বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী জানান, আমরা ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকার খসড়া এডিপি চূড়ান্ত করেছি। প্রধানমন্ত্রী এনইসি সভায় এডিপি অনুমোদন দেবেন। প্রকল্পের চাহিদা ও বাস্তবায়ন গতি দেখেই টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।