ঢাকা ১৫ অক্টোবর, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
রকিবুল হাসান রনি ও তার পরিবারের ভয়ঙ্কর প্রতারণার জাল এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১৬ অক্টোবর একদিন বাকি, নিবন্ধন করেছেন মাত্র ১৫ শতাংশ হজযাত্রী আইনের শাসন কাকে বলে, নির্বাচনের মাধ্যমে দেখাতে চাই : সিইসি গাজা সিটিতে সবাইকে ‘সন্ত্রাসী’ বলল ইসরায়েল, নিহত আরও ৫৩ ইসলামী ব্যাংকের ফেসবুক পেজ হ্যাকড, ওয়েবসাইটে হামলার হুমকি মার্কিন সরকারে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে শাটডাউন গাজামুখী ফ্লোটিলা বহর আটক, কঠোর নিন্দা জানালো বাংলাদেশ আজ বিজয়া দশমী সুমুদ ফ্লোটিলা বহরের দুই জাহাজ ঘিরে ফেলেছে ইসরায়েল

গুলশান-বনানীতে ‘স্পা’র আড়ালে মাদক-দেহব্যবসার রমরমা বাণিজ্য

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

১২ আগস্ট, ২০২৫,  10:28 PM

news image

রাজধানীর গুলশান ও বনানী—যেখানে বিদেশি কূটনীতিক থেকে শুরু করে সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণির বাস, সেই এলাকায়ই গড়ে উঠেছে একের পর এক স্পা সেন্টার, বিউটি পার্লার ও সীসা লাউঞ্জ। কিন্তু এসব নামমাত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে চলছে মাদক বিক্রি, পতিতাবৃত্তি, ব্ল্যাকমেইলসহ ভয়ঙ্কর অপরাধচক্রের রমরমা বাণিজ্য।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, গুলশান-বনানীর প্রায় প্রতিটি রোডেই ফ্ল্যাট বা ভবন ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে স্পা বা বিউটি পার্লার। এসব স্থানে বৈধ ব্যবসার নামে চলছে অবাধ যৌন বাণিজ্য। অভিযোগ রয়েছে—বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে ১৪-১৫ বছর বয়সী মেয়েদের পর্যন্ত ব্যবহার করা হচ্ছে। ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে সেক্সুয়াল ইঙ্গিতপূর্ণ বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহক টেনে আনা হয়। স্পা করানোর নামে দেহব্যবসা করানো হয় এবং গোপনে ছবি কিংবা ভিডিও ধারণ করে পরে ব্ল্যাকমেইল করা হয়।

চোখে পড়ার মতো একটি বাড়ি হলো গুলশান-২ এর ২৪ নম্বর রোডের ৯১/বি। এই ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত চলছে একটি পূর্ণাঙ্গ যৌনপল্লী। এর পেছনে রয়েছেন হীরা, মিজান ও মীরাজ নামে তিনজন। রোড ৯৯-এর ৩৭ নম্বর বাড়ির লিফটে পঞ্চম তলায় ‘বাহার’ নামে এক ব্যক্তি গড়ে তুলেছেন আরেকটি পতিতালয়। রোড ৪১, ছোঁয়া বিউটি পার্লারের দ্বিতীয় তলায় ‘কুদ্দুস’ নামে এক ব্যক্তির যৌনপল্লী, যিনি রোড ৯৫-এর ১ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় একই ধরনের আরেকটি স্পা চালাচ্ছেন।

বিচিত্র তথ্য হলো—এই ভবনটি একবার সিটি করপোরেশন সিলগালা করলেও তালা ভেঙে ফের চালু করে ফেলা হয়। অভিযোগ রয়েছে, এই কুদ্দুস একজন প্রভাবশালী ‘অদৃশ্য শক্তির’ ছত্রছায়ায় ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। গুলশান-২ এর ৩৩ নম্বর হাউজ, রোড ৪৫-এর ‘অধরা থাই স্পা’র আড়ালেও চলছে একই কর্মকাণ্ড, মালিক রত্না আক্তার। বনানী ৩ নম্বর রোডের ৪ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় পায়েল নামে এক আওয়ামীপন্থী ব্যক্তি যৌন ব্যবসা চালাচ্ছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। গুলশান থানার সাবেক ওসি মাহমুদের চাঁদা তোলার এজেন্ট হিসেবে পরিচিত ‘মাফিয়া’ শাহ আলম রবি টাওয়ারের পাশের ভবনে লিফটের পাঁচে দুটি ফ্লোর ভাড়া নিয়ে গড়ে তুলেছেন স্পা সেন্টার, যেখানে চলছে দেহব্যবসা।

এদিকে রেস্টুরেন্টের লাইসেন্স নিয়েই অনেক আবাসিক ফ্ল্যাটে গড়ে তোলা হয়েছে সীসা লাউঞ্জ। কোনো লাইসেন্স নেই, নেই স্বাস্থ্য বা অগ্নিনির্বাপণ ছাড়পত্র, তবু এসব স্থানে প্রকাশ্যে মাদক সেবন চলছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদুল ইসলাম মোস্তাক স্পষ্ট করে বলেছেন, উত্তর সিটি করপোরেশন কখনো স্পা বা সীসা লাউঞ্জের লাইসেন্স দেয় না। তিনি বলেন, আমরা মাঝেমধ্যে অভিযান চালাই, তবে বাস্তবতা হলো—এই অবৈধ প্রবণতা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম আহাম্মদ জানান, সীসা লাউঞ্জের কোনো অনুমতি সরকার দেয় না। এগুলো পুরোপুরি অবৈধ। আমি কিছু লাউঞ্জে মামলা দিয়েছি, কিন্তু অন্যান্য সংস্থাগুলো নিষ্ক্রিয় থাকায় তা থামানো যাচ্ছে না।

গুলশান জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার তারেক মাহমুদ বলেন, যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাই, সঙ্গে সঠিক ঠিকানা থাকে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিই। আপনারা ঠিকানা দিয়ে সহযোগিতা করলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো—কমিশনার অফিসের সামনেই ১৭ নাম্বার রোডের জাতীয় পার্টির অফিসের সামনের ভবনে স্পা আর সীসা লাউঞ্জ চলছে, সেটির ব্যাপারেও প্রশাসন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনো অভিযানের খবর নেই।

এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে—গুলশান ও বনানীর মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কীভাবে এসব স্পা, লাউঞ্জ ও পতিতালয় দিনের পর দিন বেঁচে থাকে প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে? বাস্তবতা হলো, চোখ এড়িয়ে নয়—প্রশাসনের চোখের সামনেই চলছে সবকিছু। মাসোহারায় নিশ্চুপ থাকা এক শ্রেণির কর্মকর্তা-পুলিশ সদস্যদের ছত্রছায়ায় জমজমাট হয়ে উঠেছে এই ব্যবসা।

logo
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: মনিরুজ্জামান মনির