চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশের বেপোরোয়া কমিশন বাণিজ্য
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৬ অক্টোবর, ২০২৪, 1:07 PM
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৬ অক্টোবর, ২০২৪, 1:07 PM
চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশের বেপোরোয়া কমিশন বাণিজ্য
সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের আশির্বাদপুষ্ট পলাশ চন্দ্র দাসের চাকরি জীবন শুরু করেন লক্ষীপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী হিসেব। এরপর পদোন্নতি পেয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তার জন্মস্থান নোয়াখালীতে। সর্বশেষ ২০২২ সালে চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ও খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর (অ: দা:) পালন করছেন।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ,জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাস যোগদানের পর থেকে চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়িতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে টেন্ডারের তথ্য ফাঁস, দর-কষাকষির নামে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ঠিকাদার নিয়োগ, মানহীন ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার, সংস্কার, সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের নামে ভুয়া বিল-ভাউচার করে অর্থ আত্মসাৎ করার। একইভাবে আরএফকিউ টেন্ডারের নামে নিজস্ব ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেয়া, টেন্ডার ছাড়া গুদামের মাল বিক্রি, ভুয়া কাজ দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ ও নিম্মমানের পানির ট্যাংক স্থাপন করার অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রাক্কলন তৈরি, টেন্ডারের শর্তানুসারে কাজ বুঝে না নেয়া, বেনামে ঠিকাদারি কাজ পরিচালনা করে সরকারের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে, নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাস চট্টগ্রামে যোগদানের পর প্রাক্কলনিক মারজাহান বেগম, বিভাগীয় হিসাব রক্ষক মইনুল ইসলাম ও সঞ্জয় বাবু কে ব্যবহার করে দরপত্রের অবৈধ কমিশন বাণিজ্য চালিয়ে আসছে। আর খাগড়াছড়িতে যোগদানের কিছু দিনের মধ্যে খাগড়াছড়ির হিসাব রক্ষক রতন দেব নাথকে তার দরপত্রের অবৈধ কমিশন বাণিজ্যের ভাগিদার করে নেই। এবং তার সহযোগীতায় কিছুদিনের মধ্যের খাগড়াছড়িতে পলাশ চন্দ্র দাসের স্ত্রীর নামে ৫ কোটি টাকার সম্পত্তি নাম মাত্র মূল্যে ক্রয় করেছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় আত্নীয় স্বজনের নামে-বেনামে ব্যবসা বাণিজ্য ও সম্পত্তি ক্রয় করেছে। দেশের বাইরে ও পাচার করেছে কোটি কোটি টাকা ।
পাশাপাশি ওনার অবৈধ লেনদেনের সহযোগীরাও ২ বছরে বনে গেছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি মালিক। খাগড়াছড়ি অফিসের হিসাব রক্ষক রতন দেব নাথ পলাশ চন্দ্র দাসের বদৌলতে খাগড়াছড়িতে তার স্ত্রী (স্কুল শিক্ষক) নামে একাধিক প্লট-ফ্ল্যাট ও চট্টগ্রাম শহরে আত্নীয় স্বজনের নামে-বেনামে একাধিক প্লট ও ফ্ল্যাট সহ প্রচুর অর্থ বিত্তের মালিক বনে গেছে। এছাড়াও প্রতিমাসের অধিকাংশ সময় তার কর্মস্থল খাগড়াছড়ি অফিসের হাজিরা রেজিষ্টারে ভূয়া স্বাক্ষর করে বিভিন্ন ঠিকাদারদের নামী দামী গাড়ি করে পরিবারসহ চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন জায়গায় যাতায়ত করেন। খাগড়াছড়ি অফিসের এই হিসাব রক্ষক রতন দেব নাথ পলাশ চন্দ্র দাসের নির্দেশে যত অবৈধ ঘুষের টাকা আদান প্রদান করে আসছিলো। রতন বাবুর বিষয়টি যখন খাগড়াছড়িতে স্থানীয় সাংবাদিকরা জেনে যায় তখন বিভিন্ন সাংবাদিককে টেন্ডার দিয়ে ম্যানেজ করা হয়। এখন পলাশ চন্দ্র দাসের এই সব অবৈধ লেনদেন আরেকজন মহিলা কর্মচারিকে দিয়ে করানো হচ্ছে। এছাড়াও প্রাক্কলনিক মারজাহান বেগম, বিভাগীয় হিসাব রক্ষক মইনুল ইসলাম ও আরেকজন আস্থতাভাজন সঞ্জয় বাবু কে দিয়েও চট্টগ্রাম অফিসের এই সব কমিশন বাণিজ্য দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসছে পলাশ চন্দ্র দাশ।
ঠিকাদারদের অভিযোগ, মেশন ও মেকানিকরা গ্রামে ঘুরে ঘুরে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আঁতাত করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রতি প্রকল্প থেকে। দরিদ্র ও হতদরিদ্ররা সুযোগ-সুবিধা না পেলেও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে বসান সরকারি নলকূপ।
তাছাড়া এসব প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান, বিল প্রসেসিং, মাসিক হিসাব প্রতিবেদন, বাৎসরিক বাজেট, অডিট/নিরীক্ষা কার্যক্রম, কার্যাদেশসহ সব কিছু হয়ে থাকে এই নির্বাহী প্রকৌশলীর মাধ্যমে। আর এই সুযোগে প্রকল্পে যা ইচ্ছে বিল করে তা পিডি (প্রকল্প পরিচালক ঢাকা) থেকে অনুমোদন নিয়ে হরিলুটে মেতে আছে সংঘবব্ধ সিণ্ডিকেট।জানা যায়, সাবেক খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ক্ষমতা বলে সরকার পতনের আগে খাগড়াছড়ি অফিসে জনবল নিয়োগে কোটি টাকা বাণিজ্য করেছে পলাশ চন্দ্র দাস। এই লেনদেনের সম্পূর্ণ মাস্টারমাইন্ড ছিলেন পলাশ চন্দ্র দাস । অথচ ৫ আগষ্ট সরকার পত্তনের পর রাত্রারাত্রি বেশ কিছু প্রকল্প সম্পূর্ণ অবৈধ পন্থায় বিএনপি সমর্থিত ঠিকাদারকে দিয়ে নিজেই বিএনপি সমর্থিত বনে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে , খাগড়াছড়ির জেলা পরিষদের সদস্য পদ ভাগিয়ে নেওয়ার জন্য ইতি মধ্যে বিভিন্ন রাজনীতিক দলীয় নেতাসহ সংশ্লিষ্টদের নানা ভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে পলাশ চন্দ্র দাস। জেলা পরিষদের সদস্য পদ পেলে পলাশ চন্দ্র দাসের কমিশন বাণিজ্য করতে আর কোন বাধা থাকবে না। অথচ আওয়ামীলীগ সরকার আমলে বিএনপি ও জামায়েত সমর্থিত কোন ঠিকাদারকে অফিসে আসলে ব্যবসার কথা দূরে থাক সরাসরি অপমান করা হতো। এমনকি তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ দিয়ে ও কোন বিচার পাওয়া যেতো না। একাধিকবার বিভিন্ন পত্রিকায় পলাশ চন্দ্র দাসের অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হলেও আওয়ামীলীগ সরকারের ক্ষমতা বলে বহাল তরিয়তে কমিশন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
জনগন ও রাষ্টের উন্নয়নে সরকারের এইসব প্রকল্পের কোটি কোটি টাকার এভাবে দিনের পর দিন হরিলুট চললেও রহস্যজনক কারণে দৃষ্টি দেননি দুদক বা সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে এইসব টেন্ডার বাণিজ্য দামাচাপা দিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে থাকেন পলাশ চন্দ্র দাশ। যার কারণে পলাশ চন্দ্র দাশ এইসব কমিশন বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম অনায়াসে করে যাচ্ছেন। এছাড়াও নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাসের এই সব বেপোরোয়া ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে লিখিতভাবে জানানো হলেও কোন এক অদৃশ্য ক্ষমতা বলে এখনও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি ।
যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, সিন্ডিকেট করে আমার এখানে কাজ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ওটিএম ও এলটিএম দুই পদ্ধতিতে টেন্ডার হয়ে থাকে। ওটিএমে সারাদেশের ঠিকাদাররা অংশ নিয়ে থাকেন। আর এলটিএমে শুধুমাত্র এই সার্কেলের ঠিকাদাররা অংশ নিতে পারেন। তবে একজন ঠিকাদার সারা বছর মিলে ৪/৫টি কাজের বেশি পেয়েছে এমন কোনো নজির নেই। পলাশ চন্দ্র দাস আরও বলেন, দুই/একটি কাজে ঠিকাদারের প্রস্তাবিত মূল্য সরকারি গোপন মূল্যের সঙ্গে মিলে গেছে। তা আমার দপ্তর থেকে প্রকাশ হয়েছে, তা কিন্তু নয়। এটা উপরের কোনো টেবিল থেকে হতে পারে। আমার নজরে আসার পর এখন ভিন্ন কৌসল অবলম্বন করছি।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও আওয়ামীলীগের রেখে যাওয়া সিন্ডিকেট এখনও মিলে মিশে সরকারি প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা আত্নসাৎ করে আসছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট সংস্কারের অংশ হিসেবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মতো সেবা দাতা প্রতিষ্ঠানে নির্বাহী প্রকৌশলীর মতো মহান পেশাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা কর্মকর্তা পলাশ চন্দ্র দাস ও তার অবৈধ কমিশন বাণিজ্যের সাথে জড়িত সকল দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন নাগরিক সমাজ।