জাপায় আবার দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব
নিজস্ব প্রতিবেদক
০১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, 11:42 AM
নিজস্ব প্রতিবেদক
০১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, 11:42 AM
জাপায় আবার দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব
থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ বুধবার চিঠির মাধ্যমে জাতীয় পার্টির (জাপা) কমিটি ভেঙে দিয়ে কাউন্সিল ডেকেছেন। নিজেকে কাউন্সিলের প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ঘোষণা করেছেন। আর ‘বাদ’ দিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে।
জাপা বিবৃতিতে জানিয়েছে, সম্মেলন আহ্বান ও আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ঘোষণার এখতিয়ার নেই দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের। তার চিঠি অবৈধ, অনৈতিক ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থি।
থাইল্যান্ড থেকে চিঠিতে রওশন এরশাদ জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও সালমা ইসলামকে প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক পদ দিয়েছেন। নিজের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসিহকে করেছেন সদস্য সচিব।
ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, কাউন্সিল হবে ২৬ নভেম্বর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে।জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক বলেছেন, প্রধান পৃষ্ঠপোষক পদটি আলংকারিক। কাউন্সিল আহ্বানের ক্ষমতা রওশন এরশাদের নেই। তিনি কারও সঙ্গে কথা না বলেই মহাসচিব ও কো-চেয়ারম্যানদের যুগ্ম আহ্বায়ক বলে ঘোষণা করেছেন। যা ভিত্তিহীন। রওশন এরশাদের অসুস্থতার সুযোগে, তাকে দিয়ে কয়েকজন সাবেক ও বহিষ্কৃত নেতা অনেক কিছু করাচ্ছেন। নেতাকর্মীরা জিএম কাদেরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।
বিরোধী দলের নেতা রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসিহ বুধবার থাইল্যান্ড থেকে ফিরেছেন। জিএম কাদের দলকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নীতি আদর্শ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছেন। সে কারণেই রওশন এরশাদ দলের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আহ্বায়ক কমিটি করে কাউন্সিল ডেকেছেন।
রওশন এরশাদ স্বাক্ষরিত ৩ পৃষ্ঠার চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয় পার্টি এরশাদের আদর্শ ছেড়ে ভ্রান্ত পথে চলছে। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে জাপা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক হয়ে ভোটে অংশ নেয়। জাপার সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সরকার পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। জাপার শীর্ষস্থান দখল করা নেতৃত্ব এই কৃতিত্বের ভাগীদার হতে অনীহা দেখিয়েছে। আবার সীমান্ত হত্যা বন্ধে, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম সমুন্নত রাখা ও রাসুল (সা.) এর অবমাননার বিরুদ্ধে জাপা সোচ্চার নয়।
রওশন বলেছেন, রাজনীতিতে জাপার অবস্থান দুর্বল। ত্যাগী নেতাদের বসিয়ে রাখা হয়েছে। টাকার বিনিময়ে পদ দেওয়া হচ্ছে। আগামী নির্বাচনের জন্য লড়াকু কর্মীবাহিনী গড়তে নতুন নেতৃত্ব প্রয়োজন। যেসব নেতাকর্মী বিভিন্ন দলে চলে গেছে তাদের ফিরিয়ে এনে বিএনপি, জামায়াতের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে জাপাকে শক্তিশালী করতে হবে।করোনা মহামারি শুরুর পর রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন রওশন। ফুসফুসের রোগে গত বছরের আগস্ট থেকে তিন মাস ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসার পর তাকে গত ৫ নভেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে থাইল্যান্ড নেওয়া হয়। ২৮ জুন ব্যাংকক থেকে সংসদে যোগ দেন। ২ জুলাই নিজ অনুসারীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন। জিএম কাদেরপন্থিরা এতে যাননি। পাল্টা হিসেবে জিএম কাদের ও তার অনুগতদের সাক্ষাত দেননি রওশন। অভিযোগ করেন, তার অসুস্থতার সময় দলের কেউ খোঁজ নেয়নি। ৫ জুলাই ফের ব্যাংকক যাওয়ার সময় ভাবি রওশনকে বিমানবন্দরে বিদায় জানাতে যান দেবর জিএম কাদের।