ঝড় তীব্র না হলেও বড় ক্ষতির ঝুঁকি উপকূলে
নিজস্ব প্রতিবেদক
১০ মে, ২০২২, 2:07 PM
নিজস্ব প্রতিবেদক
১০ মে, ২০২২, 2:07 PM
ঝড় তীব্র না হলেও বড় ক্ষতির ঝুঁকি উপকূলে
আবহাওয়াবিদরা আশার পাশাপাশি শোনাচ্ছেন শঙ্কার কথাও। তারা বলছেন, আসানির তেজ ধীরে ধীরে কমছে। বর্তমান গতিবিধি অনুসারে ঝড়টি আজ মঙ্গলবারের মধ্যে ভারতের অল্প্রব্দপ্রদেশ-ওডিশা উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। স্থলভাগে আঘাত হানার আশঙ্কা খুবই কম। ক্রমাগত শক্তি হারিয়ে ঝড়টি আগামী দু'দিনের মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারি বৃষ্টিপাত আর জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে যেতে পারে উপকূলের বাড়িঘর। বরিশাল ও নোয়াখালী অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ-সাত ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। কক্সবাজার এলাকায় ধসে পড়তে পারে পাহাড়।
বদলাচ্ছে গতিপথ, প্রভাব পড়বে উপকূলে :যতই উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড়, ততই সমুদ্রের চেহারা বদলে যাচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন, ঘূর্ণিঝড় কোনো উপকূলে আছড়ে না পড়লেও সমুদ্র ফুঁসে উঠবে। তার জেরে হতে পারে জলোচ্ছ্বাস।
এখনও বাংলাদেশ উপকূল থেকে 'আসানি' হাজার কিলোমিটার দূরে থাকলেও ঝড়ের কেন্দ্র থেকে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ ভেসে এসেছে। এর প্রভাবে গতকাল সোমবার বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রামসহ উপকূলীয় এলাকাগুলোতে বৃষ্টি হয়েছে। সাগর রয়েছে উত্তাল। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে সৈকত তীরে। শেষ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানবে কিনা, তা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি আবহাওয়া অধিদপ্তর।
কানাডার সাসকাচুয়ান ইউনিভার্সিটির আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, আসানি ওডিশা উপকূল পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় হিসেবে থাকবে। এর পর গতি কমে এটি নিম্নচাপ কিংবা লঘুচাপে পরিণত হতে পারে। আগামী শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত এটি ওডিশায় অবস্থান করতে পারে। এরপর সাধারণ লঘুচাপ আকারে এটি বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দিকে এগোতে থাকবে। বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে ধুঁকতে পারে উপকূল। ১৪ মে পূর্ণিমা। পূর্ণিমা ও ঘূর্ণিঝড়ের মিলনে জোয়ারের উচ্চতা বেশি হবে।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় বনের বিভিন্ন স্থানে ১২টি মাটির ঢিবি বা কেল্লা তৈরি করা হবে। এ ছাড়া পুকুরগুলোর পাড়ের উচ্চতাও বাড়ানো হচ্ছে।
বৃষ্টিতে কৃষি খাতে ক্ষতি, উপকূলে আতঙ্ক :ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষি খাতের ক্ষতি হয়েছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় রবিশস্য পানিতে তলিয়ে গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে কুয়াকাটা রক্ষা বেড়িবাঁধের ৪৮ নম্বর পোল্ডারের দুটি পয়েন্টসহ সমুদ্র মোহনা আন্ধারমানিকের তিন নদীর সংযোগস্থল নিজামপুর, কোমরপুর ও সুধীরপুর বেড়িবাঁধ।
বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়নের চাষি নাজমুল শেখ বলেন, 'ঈদের আগের দিন থেকে অনেক বৃষ্টি ছিল। গত দুই-তিন দিন বৃষ্টি না থাকায় আমরা ধান কেটে মাঠে রেখেছিলাম। সেগুলো বাড়ি আনার আগেই সব শেষ হয়ে গেল।' বৃষ্টির কারণে যশোরের কেশবপুরে পাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। তারা ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। পিরোজপুরের নাজিরপুরে এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও ধান ঘরে তুলতে পারেননি অধিকাংশ কৃষক। কারও ধান মাঠে, আবার কারও ধান বাড়ির আঙিনায়।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানীর কচা ও বলেশ্বর নদীর বেড়িবাঁধ না থাকায় আতঙ্কে রয়েছেন নদী তীরের বাসিন্দারা। শরণখোলার সুন্দরবন সংলগ্ন উত্তর সাউথখালী এলাকার মিজানুর রহমান বলেন, 'সিডরে আপনজন হারিয়েছি, ঘরবাড়ি, জমিজমা হারিয়েছি। সিডরের পরে আইলা, নার্গিস, বুলবুল, আম্পান, ইয়াসসহ একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে মূল্যবান সম্পদও হারিয়েছি। এ বছর নাকি আবার আসানি আঘাত হানবে। কী হবে বুঝতে পারছি না।'