দেশী বিদেশী পর্যটন মুখরিত বাংলার তাজমহল
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৬ অক্টোবর, ২০২২, 11:30 AM
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৬ অক্টোবর, ২০২২, 11:30 AM
দেশী বিদেশী পর্যটন মুখরিত বাংলার তাজমহল
সম্রাট শাজাহানের অনুপম ভালবাসার নিদর্শন ভারতের আগ্রার তাজমহল। ভালবাসার অমর নায়ক হিসেবে মধ্যযুগে পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের একটি আশ্চর্য স্থাপনা রচিত হয়েছিল তার হাত দিয়ে। এজন্য তার স্ত্রী মমতাজের ভালবাসায় সিক্ত সম্রাট শাজাহান সারা পৃথিবীতে ভালবাসার অনুরাগীদের কাছে আজও অমর। আগ্রার তাজমহলের আদলেই প্রাচীন বাংলার রাজধানী নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বাংলার তাজমহল নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ মনি। যাতায়ত ব্যবস্থা সহজ ও চতুরমুখী হওয়ায় এসিয়ান হাইওয়ে সড়কের পার্শ্বে পেরাব এলাকায় অব¯ি’ত বাংলার তাজমহল বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশকে তারকা চিহিৃত করেছে। প্রতিদিন দেশী-বিদেশী পর্যটক আসেন সোনারগাঁয়ে বাংলার তাজমহলে। পর্যটকদের ভাষ্যমতে ও বাস্তবতা উপলব্ধি করে কয়েকজন পর্যটক বলেন বাংলার তাজমহল আমাদেরকে দারুন ভাবে আকৃষ্ট করেছে। নিঃসন্দেহে বাংলার তাজমহলটির গুরুত্ব অনেক। ছাঁয়া ডাকা, পাখি ডাকা, নিরিবিলি পরিবেশে নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁ পেরাবো গ্রামে ১৮ বিঘা জমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে বাংলার তাজমহল। এলাকাবাসীর সম্মলীত উদ্যোগে তাজমহলের পাশে ২০ বিঘা জমির উপর নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের স্মৃতি ভাস্বকর্য, আইফেল টাওয়ার, ঈশাখার ফিল্ম সিটির দ্বিতীয় প্রজেক্ট, মিশরের পিরামিড, ৫টি সুটিং ফ্লোর, ডিজিটাল সিনেমাহল, মাটির নিচে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছের মনোরম এ্যাকুরিয়াম, একটি ফাইভস্টার মানের আবাসিক হোটেলসহ নানা আয়োজন। একারনে বাংলার তাজমহল এখন দেশী-বিদেশী পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও আশপাশে পর্যটনের জন্য প্রায় ৫২ বিঘা জমি সংরক্ষিত রয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ মনি ১৯৮০ সালে সপরিবারে প্রথমে ভারতের আগ্রার তাজমহল দেখতে যান এবং এর স্থাপত্য শৈলী ও কারুকার্য দেখে মুগ্ধ হন তিনি। তখন থেকেই মূলত তিনি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন আগ্রার তাজমহলের আদলে বাংলাদেশেও একটি তাজমহল তৈরি করবেন যার নাম হবে বাংলার তাজমহল। তাই তিনি তার স্বপ্ন পূরণের লক্ষে পেরাব এলাকায় আগ্রার তাজমহলের আদলে নির্মাণ করেন ‘বাংলার তাজমহল’। প্রথম একজন দক্ষ প্রকৌশলীর মাধ্যমে এর মাপ এনে পরবর্তী সময়ে ভারত থেকে স্থাপত্য শিল্পের ওপর দক্ষ ছয়জন টেকনিশিয়ান দিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ইটালী থেকে আমদানী করা টাইলস ও বেলজিয়াম থেকে আনা ১৭২টি কৃত্রিম ডায়মন্ডসহ উপরে চাঁদ-তারা তৈরীতে ব্যবহার করা হয়েছে ৪ মন ব্রোঞ্জ। এছাড়া বাংলার তাজমহলের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য রয়েছে পানির ফোয়ারা, চারদিকে ফুলের বাগান, দুই পাশে দর্শনার্থীদের বসার স্থান। বাংলার তাজমহল তৈরিতে সময় লেগেছে মাত্র ৫ বছর এবং নির্মাণ কাজে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫৮ মিলিয়ন ডলার। এর অভ্যন্তরে আহসানউল্লাহ মনি ও তার স্ত্রী রাজিয়া দু’জনের কবরের স্থান সংরক্ষিত রয়েছে। চার কোণে চারটি বড় মিনার, মাঝখানে মূল ভবন সম্পূর্ণ টাইলস করা। তাজমহলকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন হস্তশিল্প সামগ্রী, জামদানি শাড়ি, মাটির গহনাসহ আরও অন্যান্য পণ্য সামগ্রীর শপিংমল।
মুন্সীগঞ্জ থেকে আসা ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, ভারতে যাওয়ার সময় ও সুযোগ না থাকায় স্বপরিবারে সোনারগাঁয়ে বাংলার তাজমহলে ঘুরতে এলাম। আগ্রার তাজমহলে যাবার সু-ভাগ্য না হলেও বাংলার তাজমহল দেখার সুভাগ্য হয়েছে। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বাংলার তাজমহল অন্যন্য নিঃসন্দহে এটি গরীবের তাজমহল বলে আখ্যা দেওয়া যায়। তাজমহলের প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ মনি জানান, তার ভালবাসার গভীরতা সম্রাট শাজাহানের মত চির অম্মাল করে রাখার জন্যে বাংলার তাজমহল তৈরি করেছি। দেশ-বিদেশ থেকে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক ভিড় করছেন তাজমহল দর্শনের জন্য। এখানে রয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দেশের দরিদ্র মানুষ, যাদের ভারতে গিয়ে আগ্রার তাজমহল দেখার সামর্থ্য নেই তারা যেন তাজমহল দেখার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন সেই লক্ষ্যেই এটি নির্মিত।