পোশাক রপ্তানিতে আবারো দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, 12:29 PM
নিজস্ব প্রতিবেদক
২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, 12:29 PM
পোশাক রপ্তানিতে আবারো দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ
তৈরি পোশাকের বিশ্ববাণিজ্যে অনেক দিন ধরেই তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মধ্যে। চীনের পরের অবস্থান অর্থাৎ দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানিকারক দেশের মর্যাদা পেতেই এ লড়াই। এ প্রতিযোগিতায় ভিয়েতনামকে আবারো ছাড়িয়ে গেল বাংলাদেশ। ২০২১ সাল শেষে ভিয়েতনামের চেয়ে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ৪৭২ কোটি ডলার বেশি। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) পরবর্তী প্রতিবেদনে দ্বিতীয় অবস্থানের এই স্বীকৃতি পাওয়া যাবে। সদস্য দেশগুলোর রপ্তানি বাণিজ্যের বিশ্নেষণ নিয়ে প্রতি বছর জুনে এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে সংস্থাটি।
ডব্লিউটিওর পর্যালোচনা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে ভিয়েতনামের কাছে দ্বিতীয় প্রধান পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মর্যাদা হারায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের চেয়ে ১০০ কোটি ডলার মূল্যের পোশাক বেশি রপ্তানি করে এগিয়ে যায় ভিয়েতনাম। ওই বছর বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৮০০ কোটি ডলার। ভিয়েতনামের ছিল দুই হাজার ৯০০ কোটি ডলার।
মূলত অতিমারী করোনার প্রভাবেই বাংলাদেশের দ্বিতীয় অবস্থান খোয়া যায়। ওই বছরের মার্চে দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর কয়েক দফা লকডাউনে মোট ৬৫ দিন পোশাক কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকে। এ সুযোগে ভিয়েতনাম পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে যায়।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং ভিয়েতনামের ট্রেড প্রমোশন কাউন্সিলের (ভিয়েট্রেড) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২১ সালে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৫৮০ কোটি ডলার। একই বছর ভিয়েতনামের রপ্তানির মোট পরিমাণ তিন হাজার ১০৮ কোটি ডলার।
বিজিএমইএর সহসভাপতি এবং ক্ল্যাসিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল্লাহ আজিম জানান, করোনার প্রথম ধাক্কায় কিছুটা এলোমেলো ছিল বাংলাদেশের পোশাক খাত। একটা লম্বা সময় ধরে কারখানা বন্ধ ছিল। অনেক ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান রপ্তানি আদেশ বাতিল করেছে। দরও কম দিয়েছে। ওই সময়টায় ভিয়েতনামে পুরোদমে উৎপাদন কার্যক্রম চলছিল। পরে খুব কম সময়ের ব্যবধানে আমরা করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর বিষয়টি আয়ত্ত করেছি। কড়া সমালোচনার মুখেই সাহসী সিদ্ধান্ত হিসেবে সরকার কারখানা খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে। আপৎকালীন শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধে প্রণোদনাও দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পোশাক খাত।
তিনি আরো জানান, সার্বিক পরিস্থিতিও বাংলাদেশের অনুকূলে ছিল। চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বিরোধ, ভারতে করোনার দীর্ঘ উপস্থিতি ও মিয়ানমারে অস্থিরতার বিষয়গুলোও বাংলাদেশের পক্ষে গেছে। দুই ক্রেতা জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের তত্ত্বাবধানে সংস্কার উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের পোশাক খাত শিল্প পরিবেশের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এসব মিলিয়ে হাতে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি আদেশ। তার অনুমান, বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে ভিয়েতনাম আর কখনোই বাংলাদেশকে টপকাতে পারবে না।
বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের রপ্তানি উন্নয়ন পরিসংখ্যান বিশ্নেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুতেই এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। জানুয়ারিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৮৬ কোটি ডলার। ভিয়েতনামের ছিল ২৬৬ কোটি ডলার। পরের মাসে ব্যবধান আরও বাড়ে। ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের ২৬৩ কোটি ডলারের বিপরীতে ভিয়েতনামের ছিল ১১৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ মাসটিতে ভিয়েতনামের রপ্তানি বাংলাদেশের অর্ধেক।
মার্চে অবশ্য ভিয়েতনাম আবার এগিয়ে যায় সামান্য ব্যবধানে। এপ্রিলে আবারও ভিয়েতনামের দ্বিগুণ দাঁড়ায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি। জুলাই মাসে আবার এগিয়ে যায় ভিয়েতনাম। মাসটিতে বাংলাদেশের ২৮৯ কোটি ডলারের বিপরীতে ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩১২ কোটি ডলার। বছরের বাকি আর কোনো মাসেই বাংলাদেশকে টপকাতে পারেনি দেশটি। বরং বড় ব্যবধানে কমেছে ভিয়েতনামের রপ্তানি। বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে রেকর্ড ৪০৪ কোটি ডলারেরও বেশি পোশাক রপ্তানি হয় বাংলাদেশ থেকে। মাসটিতে ভিয়েতনামের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৬২ কোটি ডলার।
ভিয়েতনামের চেয়ে অবকাঠামো এবং সহায়ক পরিবেশ বিবেচনায় দুর্বল অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে এ সীমাবদ্ধতার মধ্যেই পোশাক রপ্তানিতে এগিয়েছে বাংলাদেশ। রপ্তানি বাণিজ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বন্দর। ভিয়েতনামের আন্তর্জাতিক বন্দর আছে ১৬৩টি। বাংলাদেশের মাত্র তিনটি। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ভিয়েতনামের বন্দরের সংখ্যা ৩২০টি। অন্যদিকে বাংলাদেশের ৭০টি।