ঢাকা ১৯ অক্টোবর, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
উইন্ডিজদের বিপক্ষে যেমন হবে একাদশ, জাকের কি ফিরবেন যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াল পাকিস্তান-আফগানিস্তান বন্দরে বাড়তি মাশুল, বন্ধ ট্রেইলার চলাচল পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর অভিযানে কান্দাহারে নিহত ৪০ পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর অভিযানে কান্দাহারে নিহত ৪০ রাকসুর ভিপি-এজিএস শিবিরের, জিএস আধিপত্য বিরোধী ঐক্যের প্রায় ১৭ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এলো চট্টগ্রাম ইপিজেডের আগুন জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে না এনসিপি আড়াই ঘণ্টার ফোনালাপ, ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে ট্রাম্পকে কড়া হুঁশিয়ারি পুতিনের সবাইকে জুলাই সনদ সইয়ের ঐতিহাসিক মুহূর্তের অংশ হওয়ার আহ্বান

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর, দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানি সহযোগিতায় অগ্রাধিকার

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২,  11:50 AM

news image

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির পর ইউক্রেন-রাশিয়া সংকট বিশ্ব অর্থনীতিতে টেনে এনেছে মন্দা। যার জের খাদ্য-পোশাক থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ-জ্বালানি পর্যন্ত সবক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে প্রতিবেশীসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মিত্রদের সহযোগিতার দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে ভুক্তভোগী দেশগুলোকে। এমনই এক প্রেক্ষাপটে চারদিনের সরকারি সফরে সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে ভারতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বর্তমান পরিস্থিতিতে তার এ সফরকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ঢাকার কূটনীতিকরা আশা করছেন, এ সফরে দু’দেশের মধ্যে এমন কিছু পারস্পরিক সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বা নীতি নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

বৈশ্বিক সমস্যারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতও সম্প্রতি অস্থির অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানিই যেহেতু পণ্যের উৎপাদন থেকে শুরু করে সরবরাহ পর্যন্ত সবক্ষেত্রে জড়িত, সেহেতু এ খাতের অস্থিরতা প্রভাব ফেলছে অন্যান্য ক্ষেত্রেও। বিশেষ করে নিত্যপণ্যের বাজারসহ মৌলিক বিষয়গুলোতে এ প্রভাব দৃশ্যমান। এজন্য সরকারের নীতি-নির্ধারকরা বিদ্যুৎ-জ্বালানির অস্থিরতা দূরীকরণের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রীর সফরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে আলোচনা হতে পারে, তবে ঢাকা সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সহযোগিতার বিষয়টিতে। এছাড়া প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার বিষয়টিও থাকবে অগ্রাধিকার তালিকায়।

প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগের দিন রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমও দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন।

সফরকালে সাতটি সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন ড. মোমেন। তার ভাষ্যে, এসব চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক পানি ব্যবস্থাপনা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, রেলওয়ে, আইন, তথ্য ও সম্প্রচার প্রভৃতি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্পর্কিত।

তবে জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতার কথা উঠে এসেছে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কথায়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সংবাদ সম্মেলনে জানান, জ্বালানি ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বিদ্যমান। তৃতীয় কোনো দেশের তেল ভারতের মাধ্যমে কেনার কোনো পরিকল্পনা এই মুহূর্তে নেই। তবে আমরা ভারতের তেল নিতে পারি। জ্বালানি সহযোগিতা আরও বাড়ানোর বিষয়ে সেদেশের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে।

কূটনৈতিক সূত্র মতে, সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি সাতটিও হতে পারে, তার কম বা বেশিও হতে পারে। তবে আলোচনার অগ্রভাগে জ্বালানি সহযোগিতার বিষয়টি থাকবে বলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট।

বর্তমানে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের গৌহাটি থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর পর্যন্ত হাইস্পিড ডিজেল আসছে ট্রেনের মাধ্যমে। সেখান থেকে এই জ্বালানি সহজে সরবরাহের লক্ষ্যে চলছে ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন’ নির্মাণকাজ। এটির নির্মাণকাজ শেষ হলে আরও টেকসইভাবে ভারত থেকে জ্বালানি তেল আসার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

কূটনীতিকরা বলছেন, বাংলাদেশে জ্বালানি রপ্তানির আগ্রহ আছে ভারতের। সংকট মোকাবিলায় ভারতের সঙ্গে জ্বালানিখাতে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা চায় বাংলাদেশও। এক্ষেত্রে ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে জ্বালানি উদ্বৃত্ত থাকলে সেটা নিতে প্রচেষ্টা চালাবে ঢাকা। নির্মাণাধীন পাইপলাইন এক্ষেত্রে রাখবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। প্রধানমন্ত্রীর সফরে এই বিষয়টিই আলোচনার টেবিলে অগ্রাধিকার পেতে পারে।

নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এই সফরে সরকারপ্রধান পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পাশাপাশি যেসব শীর্ষ বৈঠক হবে, সেখানে উভয়পক্ষের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে। যার মধ্যে থাকবে অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন ও ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সহযোগিতা, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা, উন্নয়ন সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগের বিষয়ও। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়াদির পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে বিদ্যমান অস্থিতিশীলতা ও ক্ষতিগ্রস্ত সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়েও আলোচনা হবে বৈঠকে।

সূত্র মতে, ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতিতে সর্বাগ্রে থাকে বাংলাদেশ। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতেও সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সবার আগে বিবেচনা করে নয়াদিল্লি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে তারই কিছু দৃষ্টান্ত দেখা যেতে পারে।

logo
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: মনিরুজ্জামান মনির