বিশ্বকাপেও চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা
স্পোর্টস ডেস্ক
১৫ অক্টোবর, ২০২৩, 1:52 PM
স্পোর্টস ডেস্ক
১৫ অক্টোবর, ২০২৩, 1:52 PM
বিশ্বকাপেও চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা
নিজের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে একসময় খুব দেনদরবার করতেন সাকিব আল হাসান। চন্ডিকা হাথুরুসিংহের প্রথম মেয়াদে এ নিয়ে ঝগড়ার মতোও হয়ে গিয়েছিল দু’জনের। সাকিব চেয়েছিলেন টি২০ ও এক দিনের ক্রিকেটে তিন নম্বর পজিশনে ব্যাট করতে। কিন্তু কোচ চেয়েছিলেন মিডল অর্ডার শক্ত করতে বাঁহাতি এ অলরাউন্ডারকে মিডল অর্ডারে খেলাতে।
হাথুরুসিংহে এক পর্যায়ে জাতীয় দল ও আইপিএল পরিসংখ্যান দেখিয়ে সাকিবের সঙ্গে যুক্তিতর্কে জড়িয়েও মত পরিবর্তন করাতে পারছিলেন না। শেষে রেগেমেগে ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। সেই সাকিবই ব্যাটিং অর্ডার ওলটপালট করে বেশ কয়েকজন ব্যাটারের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে তাঁর খেয়ালের শিকার হয়ে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে দল। এককথায় বিশ্বকাপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে প্রায় ছিটকে পড়ছে বাংলাদেশ।
২০১৯ সালে আফগানিস্তানের কাছে টেস্ট হেরেছিল সাকিবের স্বেচ্ছাচারী কিছু সিদ্ধান্তের কারণে। প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো নতুন হওয়ায় অধিনায়ক সাকিবের ওপর দায়িত্ব ছিল দল পরিচালনার। সে ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ইচ্ছামতো ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন করে দলের পরাজয় নিশ্চিত করেন। জাতীয় দলের এমন বহু ম্যাচে ফাটকা খেলতে দেখা গেছে তাঁকে। দেশের ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এবার ওয়ানডে দলের অধিনায়ক হওয়ার পর আরও বেশি ‘গেম’ খেলছেন সাকিব।
এশিয়া কাপ থেকে ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু। বিশ্বকাপেও ব্যাটিং নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ও অধিনায়ক সাকিব। গত তিন ম্যাচের একটিতেও ব্যাটিং অর্ডার ঠিক ছিল না। ওপেনিং পজিশনে লিটন কুমার দাস ও তানজিদ হাসান তামিমকে রেখে বাকি জায়গায় ওপর-নিচ করা হয়েছে। নাজমুল হোসেন শান্তকে তিন নম্বর পজিশনে ব্যাট করতে দেওয়া হচ্ছে না এশিয়া কাপ থেকে। অথচ গত দুই বছর তিন নম্বর পজিশনে খেলে সফলতা পাওয়া এ ব্যাটার এশিয়া কাপ থেকে চার নম্বরে খেলছেন।
এশিয়া কাপে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে শান্তর বড় জুটি হয়েছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে। সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন দু’জনই। সেই থেকে শান্তর ব্যাটিং পজিশন চার নম্বরে। বিশ্বকাপে ভালো করছেন না এই পজিশনে খেলে। চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের কাছে বড় ব্যবধানে হারের পর মিডিয়ার সামনে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল সহ-অধিনায়ক শান্তকে।
আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের মঞ্চে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এভাবে ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন দলও ব্যক্তিগর ক্ষতির কারণ কিনা। উত্তরে অসহায় আত্মসমর্পণের মতো করে তিনি বলেছেন, ‘ব্যাটিং অর্ডার ঠিক করেন কোচ-অধিনায়ক। আমার মনে হয়, যাঁকে যেখানে খেলানো হচ্ছে, সেখানে খেলে সবাই খুশি। আমরা বিষয়টি মেনে নিয়েছি। হ্যাঁ, একটা নির্দিষ্ট পজিশন ঠিক থাকলে ভালো হতো। কিন্তু যাদের ওপরে খেলানো হচ্ছে, তারা ভালো করতে না পারায় এটা করছে হয়তো।’
সহ-অধিনায়কও একটি দলের টিম ম্যানেজমেন্টের অংশ। অথচ দলীয় পরিকল্পনায় তাঁকে সেভাবে যুক্ত করা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। টাইগার সহ-অধিনায়কই শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে জানান, ম্যাচের আগের রাতে একাদশের খেলোয়াড়দের রোল দেওয়া হয়। জানানো হয়– কে কোন পজিশনে ব্যাট করবে। এভাবে ব্যাটিং পজিশন ওলটপালট হলে ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিক ভালো করা কঠিন হয়ে পড়ে বলে মনে করেন ব্যাটাররা।
জাতীয় দলে এবার সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে। ওপেনিং থেকে সাত নম্বর পজিশন পর্যন্ত খেলছেন তিনি। এশিয়া কাপ থেকে গত আট ম্যাচে চারটি পজিশনে ব্যাট করার অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর। বিশ্বকাপে আফগানিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন নম্বরে আর ইংল্যান্ডের সঙ্গে পাঁচে ব্যাটিং করেন তিনি। এশিয়া কাপে ওপেনিং করেছেন তিন ম্যাচে। এককথায় হাথুরুসিংহে ও সাকিবের দলের গিনিপিগ তিনি। যদিও নিজের চেষ্টায় অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দিয়ে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে দেশের সবচেয়ে সফল ক্রিকেটার মিরাজ।
বিশ্বকাপের আগে তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাটিং পজিশন ছিল চার নম্বরে। যেখানে নেমে ভালোই করছিলেন তিনি। অথচ হৃদয়কে চার নম্বর থেকে সাত নম্বরে ঠেলে দেওয়ায় রান খরায় ভুগছেন। হৃদয়কে দেখে মনে হতে পারে, ব্যাটিংটাই ভুলতে বসেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী এ ব্যাটার। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সাকিব আর হাথুরুসিংহের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মঞ্চায়ন এভাবে হতে থাকলে বিশ্বকাপে আরও বাজে সময় আসতে পারে বাংলাদেশের।
বিষয়টি নিয়ে ফোনে ঢাকায় অবস্থানরত ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ নাজমুল আবেদীন ফাহিমের সঙ্গে পুনে থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘খেলা দেখে যেটা মনে হয়েছে– এখনও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। যেটা বিশ্বকাপের আগে শেষ করা উচিত ছিল। এশিয়া কাপে যাদের দেখা হলো তারা দলে নেই। শেষ পর্যন্ত নেওয়া হলো মাহমুদউল্লাহকে। বিশ্বকাপে ওপেনিং জুটি কাজ করছে না। এখন মিরাজকে ওপেনিংয়ে খেলাবে না মিডল অর্ডারে, বুঝে উঠতে পারছে না হয়তো। আমার মনে হয়, মাহমুদউল্লাহ রান করায় তাঁকে নিয়মিত খেলাবে। সামনের ম্যাচ থেকে মিরাজকে দিয়ে ওপেন করাতে পারে। তবে এই প্রক্রিয়াগুলো বিশ্বকাপের আগে হলে ভালো হতো।’
পুনেতে আপাতত দুই দিন অনুশীলন নেই। আশা করা যায়, বিশ্বকাপের বাকি ছয় ম্যাচের জন্য ভেবেচিন্তে পরিকল্পিত একটি সিদ্ধান্ত নেবে টিম ম্যানেজমেন্ট। যেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা নয়, সাফল্যের জন্য খেলবে দল।