ঢাকা ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম
পঞ্চগড়ে ফের তাপমাত্রার পারদ নামল ৯ ডিগ্রির ঘরে ভারতের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের কুড়িগ্রামে জেঁকে বসেছে শীত, জনজীবন বিপর্যস্ত বাংলাদেশে গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন ১২ ম্যাচে নবম হার ম্যানসিটির, আর্সেনালের বড় জয় ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের ঘন কুয়াশায় এক্সপ্রেসওয়েতে ৭ যানবাহনের সংঘর্ষ, আহত ৫ আরও তেল-গ্যাস না কিনলে ইইউ’র ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, বৃষ্টি হতে পারে ঢাকা ও উপকূলে টঙ্গীতে বেইলি ব্রিজ ভেঙে নদীতে ট্রাক, বিকল্প পথে চলার অনুরোধ

ব্যাংকঋণের বিপরীতে বেড়েছে সরকারি গ্যারান্টি

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ জুন, ২০২২,  12:47 PM

news image

দেশি-বিদেশি ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের বিপরীতে সরকারের গ্যারান্টির পরিমাণ বাড়ছে। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংক গ্যারান্টির পরিমাণ বেড়েছে ১৮ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগে। এই বিভাগের আওতায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য যে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছে তার বিপরীতে সরকারকে বেশি ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আগামী ৩০ জুন ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির কাছে সরকারের দেয়া পুঞ্জীভূত ব্যাংক গ্যারান্টির পরিমাণ দাঁড়াবে ৯২ হাজার ৬০১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। গত ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে এর পরিমাণ ছিল ৭৩ হাজার ৮৩৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। তার আগের অর্থবছরে ছিল ৬০ হাজার ৬৫৩ কোটি ৭ লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপরীতে ব্যাংক গ্যারান্টির পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৬৯২ কোটি ২২ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার ৫১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। চীনা ও ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দুটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিপরীতে সরকারি গ্যারান্টি লেগেছে ২৬ হাজার কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন ও বিদ্যুৎ খাতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, সার আমদানি, বাংলাদেশ বিমানের জন্য বোয়িং ক্রয়, জ্বালানি তেল আমদানি, কৃষিঋণ বিতরণ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থা দেশি-বিদেশি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও দাতাসংস্থার কাছ গত ২০০৪ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে এসব ঋণ নিয়েছে।

সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময়ে সরকারের নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের স্বার্থে সরকারি মালিকানাধীন আর্থিক ও অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গৃহীত ঋণের জন্য গ্যারান্টি ও কাউন্টার গ্যারান্টি দেওয়া হয়ে থাকে। এসব ঋণের অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো পরিশোধে ব্যর্থ হলে, তা পরিশোধের দায়-দায়িত্ব সরকারের ওপরে বর্তায়। কাজেই সরকারের ভবিষ্যৎ আর্থিক অবস্থার ওপর এর প্রভাব রয়েছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে, ‘পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট’ প্রকল্পের বিপরীতে। ‘বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড’ কর্তৃক তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই প্ল্যান্ট তৈরির জন্য ‘এক্সিম ব্যাংক অব চায়না’র কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে। এই ঋণের ৫০ ভাগের বিপরীতে সরকার গ্যারান্টি দিয়েছে। এই ঋণে সরকারের দেওয়া গ্যারান্টির পরিমাণ ১৫ হাজার ৪৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

ভারতের ‘এক্সপোর্ট কাম ইমপোর্ট ব্যাংকের ঋণে বাস্তবায়নাধীন ‘মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার’ প্রকল্পের বিপরীতে গ্যারান্টি দিতে হয়েছে ১০ হাজার ৯৫২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ খাতে গ্যারান্টির দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে, ‘পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র’। এর বিপরীতে ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে হয়েছে ৭ হাজার ৬৪৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এক্সিম ব্যাংক অব চায়নার কাছ থেকে ঋণ নিয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংক গ্যারান্টির তালিকা দ্বিতীয় শীর্ষে রয়েছে ‘বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। সংস্থাটি দেশের কৃষি খাতে সারের চাহিদা মেটাতে সার আমদানি করে। এর বিপরীতে সরকারকে ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে হয়। এক বছরের ব্যবধানে গ্যারান্টির পরিমাণ বেড়েছে ১৩ গুণ। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সার আমদানির জন্য জনতা ব্যাংক থেকে সংস্থাটি ঋণ নেয়। এই ঋণের বিপরীতে সরকার গ্যারান্টি দিয়েছিল ৭৬৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এক অর্থবছরের (২০২১-২০২২) ব্যবধানে সেই একই প্রতিষ্ঠানের সার আমদানি জন্য ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে হয়েছে ১০ হাজার ২৮১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। সোনালী ব্যাংকের কাছ থেকে সার আমদানির বিপরীতে এক বছরে ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে হয়েছে ৮ হাজার ৫৫৭ কোটি ৬৮ টাকা।

সূত্র আরো জানায়, বিশ্ববাজারে সারের দাম অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ার কারণে এবার সার আমদানির জন্য বেশি করে ব্যাংক ঋণ নিতে হয়েছে বিএডিসির। ফলে এ খাতে ব্যাংক গ্যারান্টির পরিমাণও অনেক বেড়ে গেছে। দেশি-বিদেশি ব্যাংক ঋণ নেওয়ার কারণে বাংলাদেশ বিমানের জন্য পুঞ্জীভূত ব্যাংক গ্যারান্টির পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৭৯৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। বিসিআইসি কর্তৃক সার আমদানির জন্য দেশীয় ব্যাংক ঋণের বিপরীতে গত বছর গ্যারান্টির পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৮৬৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা প্রকল্পের ঋণের বিপরীতে বিদেশি ব্যাংকগুলোর গ্যারান্টি লেগেছে ৬ হাজার ৪৮৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, দেশের অর্থনীতি চাঙ্গারাখার জন্যই সরকারি সংস্থাগুলোকে ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে হয়েছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারে অত্যবশ্যকীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া এবং দেশের শিল্প খাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখার তাগিদে বিভিন্ন পণ্যে আমদানির জন্য ঋণের বিপরীতে সরকারি গ্যারান্টি দিতে হয়েছে। 

logo
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: মনিরুজ্জামান মনির