রাজধানীতে কাঁচামরিচের ডাবল সেঞ্চুরি
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৫ জুলাই, ২০২২, 1:56 PM
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৫ জুলাই, ২০২২, 1:56 PM
রাজধানীতে কাঁচামরিচের ডাবল সেঞ্চুরি
ঈদের পর রাজধানীর বাজারগুলোতে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে কাঁচামরিচের দাম। এক লাফে কাঁচামরিচের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে বেশির ভাগ সবজির দাম। পাশাপাশি মুরগি এবং ডিমের দামও বেড়েছে। আজ শুক্রবার (১৫ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা কাঁচামরিচের কেজি বিক্রি করছেন ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। ঈদের আগে ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে।
কাঁচামরিচের দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কাঁচামরিচের ক্ষেতের বেশ ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া ঈদের প্রভাবে বাজারে কাঁচামরিচের সরবরাহও কম রয়েছে। সবকিছু মিলিয়েই দাম বেড়েছে।
তারা বলছেন, ঈদের আগে ২৫০ গ্রাম কাঁচামরিচ ২০ টাকায় বিক্রি করেছি। গতকাল ৪০ টাকা পোয়া বিক্রি করেছি। কিন্তু আজ যে দামে কেনা হয়েছে, তাতে ৫০ টাকার নিচে বিক্রি করার সুযোগ নেই।
ঈদের পর দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ডিমও। ঈদের আগে ১২০ টাকা বিক্রি হওয়া এক ডজন ডিম এখন বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। আর বিভিন্ন মুদি দোকানে এক পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা।
ডিমের দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের আগের দিন থেকে ডিমের দাম বাড়তি। ঈদের পর ডিমের দাম আরো বেড়েছে। ঈদের এক সপ্তাহ আগে এক ডজন ডিম ১২০ টাকা বিক্রি করা হয়েছে ঈদের আগের দিন ১২৫ টাকা বিক্রি হয় আর এখন ১৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
সবজির বাজারে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ঈদের আগের মতো এখনো সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন গাজর। বাজারের সবচেয়ে দামি এই সবজিটির দাম ঈদের পর আরো বেড়েছে। এক কেজি গাজর কিনতে ক্রেতাদের ১৮০ থেকে ২০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। ঈদের আগে গাজরের কেজি ছিল ১২০ থেকে ১৬০ টাকা। গাজরের মতো দাম বেড়েছে পাকা টমেটোরও। এক কেজি পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়। ঈদের আগে পাকা টমেটোর কেজি ছিলো ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
গাজর ও টমেটোর দাম বৃদ্ধির বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, গাজর ও টমেটোর এখন অনেক দাম। এ কারণে এখন কেউ এই দুটি পণ্য কেজি ধরে কিনছেন না। বেশিরভাগ ক্রেতা এক পোয়া করে কিনছেন। পাইকারিতে যে দাম তাতে এক পোয়া গাজর ৫০ টাকা এবং টমেটো ৪০ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব নয়।
গাজর ও টমেটোর পাশাপাশি দাম বেড়েছে বরবটি, বেগুন, কাকরোল ও কাঁচা পেঁপের। বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। কাকরোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ৪০ থেকে ৬০ টাকা। কাঁচা পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
এদিকে, ঈদের পর পটল ও ঢেঁড়সের দাম কিছুটা কমেছে। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ঢেঁড়সের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে, যা ঈদের আগে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এছাড়া করলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুর লতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ঝিঙে, চিচিঙ্গার কেজিও ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। ঈদের পর এ সবজিগুলোর দামে তেমন পরিবর্তন হয়নি।
সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে এখন যে গাজর পাওয়া যাচ্ছে তা আমদানি করা। আর পাকা টমেটো কোল্ড স্টোরের। বাজারে এ দুটি সবজির সরবরাহ খুব কম। এ কারণে দাম বাড়তি।
তারা জানান, ঈদের প্রভাবে এখন বাজারে সবজির সরবরাহ তুলনামূলক কম। আবার ঢাকা ছেড়ে যারা ঈদে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন তাদের অনেকেই ফিরে এসেছেন। এ কারণে সবজির চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। সবজির দামে এর একটা প্রভাব আছে।
কাঁচামরিচ, ডিম এবং বিভিন্ন সবজির দাম বাড়লেও অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজ ও রসুনের দাম। পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা। দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা আর আমদানি করা রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। আলুও ঈদের আগের মতো ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
মুরগির বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা।
মুরগির দামের বিষয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, মুরগি এখন খুব কম বিক্রি হচ্ছে। আবার বাজারে মুরগির সরবরাহও কম। অল্প কিছু মুরগি বাজারে আসছে। চাহিদা কম থাকলেও পাইকারিতে মুরগির দাম বেশি। আর বেশি দামে কেনার কারণে আমরা বেশি দামে বিক্রি করছি। আমাদের ধারণা, সামনে মুরগির দাম আরো বাড়তে পারে।
মাছ বাজারে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। তেলাপিয়া, পাঙ্গাস মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৬০ টাকা। শোল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। কৈ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, পাবদা মাছ ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ঈদের পর এসব মাছের দামে পরিবর্তন আসেনি।
দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ইলিশেরও। এক কেজি ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা। ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা আর ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকায়।