রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সব অপরাধের টাকার ক্যাশিয়ার কে এই রোহিঙ্গা সুলতান
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৪ মে, ২০২৩, 11:50 AM

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৪ মে, ২০২৩, 11:50 AM

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সব অপরাধের টাকার ক্যাশিয়ার কে এই রোহিঙ্গা সুলতান
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের অপহরণের মুক্তিপণের টাকা আদায়, মানবপাচারের মুক্তিপণের টাকা আদায়, মানুষ বন্ধক রেখে মাদক বিক্রির টাকা আদায় সহ বিকাশ ও হুন্ডির মাধ্যমে প্রতিমাসে শতকোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে এক রোহিঙ্গা গডফাদারের বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা তাকে বিকাশ সুলতান ও হুন্ডি সুলতান নামেই চিনে।
রোহিঙ্গা সুলতান টেকনাফ মোছনী এলাকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই ব্লকের বাসিন্দা। সুলতান মোছনী ক্যাম্পের ফজল মার্কেটে একটি গার্মেন্টসের দোকান পরিচালনার আড়ালে কয়েকটি অপহরণ চক্র, মানব পাচার চক্র, মাদক ব্যাবসায়ী, হুন্ডি ব্যাবসায়ী এবং মাদক ব্যাবসায়ীদের ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করেন বলে নিশ্চিত করেছেন একাধিক সূত্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টেকনাফ মোছনী এলাকার স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, অল্প টাকার বিনিময়ে এক দালালের মাধ্যমে তার ছেলেকে ট্রলারে করে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাঠান। কিছুদিন পর এক ব্যাক্তি ফোন করে বলেন আপনার ছেলে খুব বিপদে আছে মালয়েশিয়া পৌছাতে হলে দুই লাখ টাকা দিতে হবে। প্রশাসন বা দ্বিতীয় কোন ব্যাক্তিকে জানালে আপনার ছেলেকে মেরে ফেলা হবে। পরে কোন উপায় না পেয়ে রোহিঙ্গা সুলতানকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে আমার ছেলেকে রক্ষা করি।
সম্প্রতি অপহরণের পর মুক্তিপণ দিয়ে আসা কয়েকজন ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, অপহরণের পর মুক্তিপণের মোটা অংকের টাকা দাবী করে ডাকাত দলের সদস্যরা। টাকা দিতে অসম্মতি জানালে চালায় শারিরিক নির্যাতন। আবার নির্যাতনের ছবি বা ভিডিও পাঠানো হয় স্বজনের মোবাইলে। এবং দাবীকৃত নির্দিষ্ট টাকা না দিলে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে কোন উপায় না পেয়ে তাদের চক্রের মূলহোতা রোহিঙ্গা সুলতানকে মুক্তিপণের টাকা দিলে মিলে মুক্তি।
কয়েকটি সূত্র জানায়, বিকাশ সুলতান শুরুতে মোছনী ক্যাম্প এইচ ব্লক এলাকার ডাকাত নুরুল আলমের অপহরণের মুক্তিপণের টাকা আদায়, ডাকাতির টাকা, মাদক বিক্রির টাকার ক্যাশিয়ার ছিলেন। ডাকাত নুরুল আলম র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়ার পর মোছনী ক্যাম্পের আরেক ডাকাত কালো সেলিমের ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করেন। কালো সেলিমের অপহরণের মুক্তিপণের টাকা, মাদকের টাকা সব থাকত সুলতানের কাছে। এরপর ডাকাত কালো সেলিম জকি ডাকাতের সাথে গুলাগুলিতে মারা যাওয়ায় ডাকাত জকির ক্যাশিয়ার হিসেবে আবার কাজ শুরু করেন।
পরবর্তীতে, ডাকাত জকির র্যাবের সাথে গুলাগুলিতে মারা গেলে ইয়াবা সম্রাট জামাল হোসেন ওরফে কাকড়া জামালের সব অপকর্মের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত লাভ করেন সুলতান। কাকড়া জামালের সব মাদকের টাকা থাকত তার কাছে। মায়ানমারে হুন্ডির মাধ্যমে মাদকের টাকা পাঠানো, দেশে মাদক বিক্রির সব টাকার লেনদেন করত এই রোহিঙ্গা সুলতান। এরপর থেকে সুলতানের পরিধি বাড়তে থাকে। একে একে সব ডাকাত দলের মুক্তিপণের টাকা আদায়ের দায়িত্ব নিয়ে নেন রোহিঙ্গা সুলতান। এভাবে কয়েকটি ডাকাত চক্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন সুলতান। মায়ানমারে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে মাদক আনা থেকে শুরু করে দেশে মাদক চালানের টাকা বিকাশ ও হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন করে কয়েকবছরের ব্যাবধানে বনে যান কোটিপতি। হয়ে উঠেন মাদক সম্রাট ও হুন্ডি ব্যাবসায়ী। প্রতিমাসে বিকাশ, হুন্ডি, মানবপাচার, মাদকপাচার ও অপহরণের মুক্তিপণের শত কোটি টাকা লেনদেন করেন তিনি।
রোহিঙ্গা সুলতান বর্তমানে যে কয়েকটি অপহরণ চক্র, মানবপাচার চক্র, মাদক ব্যাবসায়ী চক্রের মুক্তিপণ আদায়ের নেতৃত্ব দেন তারা হলেন- মাদক ও অস্ত্র নিয়ে একাধিকবার প্রশাসনের হাতে গ্রেফতার হওয়া জামাল হোসেন ওরফে কাকড়া জামাল, কাকড়া জামালের ছেলে দশটি অস্ত্র মামলার আসামী ও হত্যা মামলার আসামী মোঃ কামাল হোসেন, কাকড়া জামালের দুই শালা ডাকাত তোহা ও জুবায়ের, টেকনাফ বাহারছড়া বড় হাবিব ছড়ার দীল মোহাম্মদ, সালমান শাহ বাহিনীসহ একাধিক চক্রের মুক্তিপণ আদায়কারীর প্রধান এই রোহিঙ্গা সুলতান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রোহিঙ্গা সুলতান জানান, আমি এধরণের কোন অপরাধের সাথে জড়িত নয়। এটি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হতে পারে। আপনারা সত্যতা পেলে নিউজ করেন। আমার কিছু হবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আব্দুল হালিম জানান, রোহিঙ্গা সুলতানের অপরাধের বিষয়টি আমার জানা নেই। তার বিরুদ্ধে যদি এই ধরনের অপরাধের সত্যতা পাওয়া যায় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কক্সবাজার সিআইডির পুলিশ সুপার মোঃ সাহেদ মিয়া জানান, রোহিঙ্গা সুলতানের বিষয়ে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে তদন্ত করা হবে।