ঢাকা ০২ আগস্ট, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
চট্টগ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া রোগী ৫ আগস্টের আগেও জুলাই ঘোষণাপত্র হতে পারে : মাহফুজ আলম সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে রাশিয়ার কাছাকাছি পরমাণু অস্ত্রবাহী সাবমেরিন মোতায়েন করলেন ট্রাম্প জামায়াত আমিরের হার্টের বাইপাস সার্জারি চলছে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতার অবস্থান ধরে রেখেছি : ড. খলিলুর রহমান ১৫ শতাংশ কমিয়ে বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ২০ শতাংশ নিউইয়র্কের হৃদয় জিতে বিদায় নিলেন দিদারুল বেইজিংয়ে ভয়াবহ বন্যা, এক বৃদ্ধাশ্রমেই মারা গেলেন ৩১ জন বয়স্ক মানুষ ‘সবজিই যদি এত দামে কিনে খেতে হয় তাহলে মাছ-মাংস কিনবো কিভাবে’

শুল্ক গোয়েন্দার গুদামে ছিল না সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩,  3:56 PM

news image

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুল্ক বিভাগের গুদামে থাকা লকার থেকে ৫৫ কেজির বেশি সোনা চুরির ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত করছে পুলিশ। তদন্তে, সরেজমিন ও হেফাজতে নেওয়া চার সিপাহিকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে সোনা রাখার গুদাম সিসিটিভি আওতায় ছিল না। ফলে কে বা কারা সোনা গায়েব করেছে তা নিশ্চিত কঠিন হয়ে পড়েছে।

বিমানবন্দর রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই)। বিমানবন্দরের ভেতরের সব জায়গা সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারিসহ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়। পুরো বিমানবন্দরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ সরকারি বেশ কয়েকটি সংস্থা কাজ করে। এতো নিরাপত্তার মধ্যে গুদাম থেকে সোনা চুরি হওয়া ও কাস্টমস হাউজের গুদাম সিসিটিভি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ না থাকার বিষয়টি প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সোনা চুরির এই ঘটনা ঢাকা শুল্ক বিভাগের নজরে আসে শনিবার (২ সেপ্টেম্বর)। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় পরদিন রোববার। বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসের নিজস্ব গুদামে দিনভর ইনভেন্টরি শেষে ৫৫ কেজি সোনা চুরি বা বেহাত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এঘটনায় চার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়ী করে মামলার কথা জানালেও মামলা হয়েছে অজ্ঞাতদের আসামি করে। পুরো ঘটনা তদন্তের জন্য যুগ্ম-কমিশনার মিনহাজ উদ্দীনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম গঠন করেছে কাস্টমস হাউজ।

রোববার (২ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকা শুল্ক বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় এ বিষয়ে মামলা করেন।

মামলার কপি সংগ্রহের পর জানা যায়, মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের। শনিবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টা থেকে পরদিন রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে কে বা কারা গুদামের আলমারি লকার ভেঙে সোনাগুলো নিয়ে যান বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে। শুল্ক বিভাগ বলছে, চুরি হওয়া এই সোনার মূল্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকা।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকাল ৯টার দিকে ঢাকা শুল্ক বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মাসুদ রানা যুগ্ম কমিশনারকে বিমানবন্দরের ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ শাখার কাছে শুল্ক বিভাগের গুদামের মূল্যবান পণ্য সামগ্রী রাখার একটি স্টিলের আলমারির লক ভাঙা বলে জানান।

তিনি যুগ্ম কমিশনারকে আরও জানান, প্রতিদিনের মতো আটক পণ্য গুদামে রেখে তিনিসহ চারজন রাত সাড়ে ১২টার দিকে শুল্ক বিভাগ ছেড়ে চলে যান। গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এমন সংবাদ পেয়ে ওই গুদাম পরিদর্শনে যান ঢাকা শুল্ক বিভাগের কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার ও যুগ্ম কমিশনার। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি কাস্টমস হাউস, ঢাকা কর্মরত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। গোডাউন পরিদর্শনে গিয়ে গোডাউনের ভেতরে একটি স্টিলের আলমারির লকার ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান এবং গোডাউনের পূর্বপার্শ্বের ওপরের দিকে এসির বাতাস বের হওয়ার টিনের কিছু অংশ কাটা দেখতে পান। একইসঙ্গে তিনি গোডাউনে কর্মরত এ, বি, সি ও ডি শিফটের কর্মকর্তা মাসুম রানা, সাইদুল ইসলাম শাহেদ, শহিদুল ইসলাম ও আকরাম শেখ (সবাই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা) এবং রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন ও নিয়ামত হাওলাদার নামে চার সিপাহিকে আলমারির লক ভাঙার ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে কেউ কোনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি।

মামলার এজাহারে উল্লেখিত তথ্য মতে, গুদামের দায়িত্ব কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কোনো সন্তোষজনক উত্তর না পেয়ে শুল্ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গুদাম থেকে কোনো মূল্যবান বস্তু চুরি হয়েছে কি-না, তা নিশ্চিত হতে গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশনা দেন। পরে দিনভর গুদামের দায়িত্ব কর্মকর্তারা আটকের রসিদ (ডিএম) মোতাবেক দেখতে পান ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে জব্দ করা ৫৫ কেজি ৫১ গ্রাম সোনা চুরি হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোর্শেদ আলম বলেন, চুরির ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। এই চুরির রহস্য উদ্ঘাটনে গুদামের দায়িত্বরত চার সিহাপী রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন ও নিয়ামত হাওলাদারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিমানবন্দরের ভেতরের গুদামের দায়িত্ব পালন করেন চারজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও চারজন সিপাহি। তাদের মধ্যে চার সরকারি রাজস্ব কর্মকর্তারা হলেন মাসুদ রানা, সাইফুল ইসলাম শাহেদ, শহিদুল ইসলাম ও আকতার শেখ।

ডিসি মোর্শেদ বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে ও তথ্যানুসন্ধানে জানতে পেরেছি, গায়েব হওয়া সোনা ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময় উদ্ধার করা হয়েছিল। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী এসব সোনা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে যাবার কথা, এখানে থাকাটা প্রশ্নের উদ্রেক করে।

তিনি আরও বলেন, আমরা সোনা রাখার গুদাম ঘর পরিদর্শন করেছি, এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা সিসিটিভির আওতায় ছিল না, অবাক করার মতো বিষয়। তাই কে বা কারা সোনা সরিয়েছে তা স্পষ্ট করা যাচ্ছে না। সচল সিসি ক্যামেরা গুদাম ঘর মনিটরিংয়ের আওতায় থাকলে বের করা সহজ হতো কারা সোনা সরিয়েছে।

ঢাকা কাস্টমস হাউসের কমিশনার নুরুল হুদা আজাদ বলেন, বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। এজন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত চারজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। 

ঢাকা কাস্টমস হাউসের একটি সূত্র বলছে, গুদামে আনুমানিক ২০০ কেজির বেশি সোনা ছিল। যার মধ্যে ৫৫ কেজির বেশি চুরি হয়েছে।

logo
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: মনিরুজ্জামান মনির