‘মানুষ বাঁচানোর কাজ প্রথম করলাম’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৯ নভেম্বর, ২০২৩, 12:44 PM
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৯ নভেম্বর, ২০২৩, 12:44 PM
‘মানুষ বাঁচানোর কাজ প্রথম করলাম’
ওয়াকিল হাসান। তার নেতৃত্বে থাকা ১২ জনের দলই উত্তরকাশীতে ইঁদুরের মতো গর্ত করে সুড়ঙ্গে আটকে থাকা ৪১ জন শ্রমিককে উদ্ধার করেছে। মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) রাতে উদ্ধারকাজ শেষে সেই ‘দলপতি’ জানালেন, কাজটা ভীষণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। এক নিশ্বাসেই জানালেন, মানুষ বাঁচানোর কাজ তারা এই প্রথম করলেন। পাশাপাশি, দেশের জন্য কিছু একটা করতে পেরেছেন বলে যে ‘গর্ব’ অনুভব করছেন ওয়াকিলেরা, সে কথাও বলতে ভুললেন না।
ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের উত্তরকাশীতে ধসে পড়া সিল্কিয়ারা টানেলের ভেতর আটকে পড়া ৪১ শ্রমিকের সবাইকে সফলভাবে উদ্ধার করা হয়েছে। ১৭ দিনের রুদ্ধশ্বাস এক অভিযানে মঙ্গলবার তাদের উদ্ধার করা হয়।
ওয়াকিল বলেন, ‘ছোট জায়গায় বসে কাজ করা খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। এর মধ্যেই বসে কেটে কেটে এগিয়ে যাওয়া, মাঝে মাঝে পাথর চলে এলে সেটা কাটা, পাইপ সরানো, মাটি সরানো.. সেই মাটি বাইরে বের করা। শেষ পর্যায়ের কাজটা খুব, খুবই কঠিন ছিল। সব কাজ শেষ হয়ে গেছে। ভালোভাবেই সব শেষ হলো।’
দিল্লির বাসিন্দা ওয়াকিল। জীবিকা নির্বাহে সেখানে ‘ম্যানুয়াল জ্যাক পুশিং’-এর কাজ করেন। মাটির তলায় পানির লাইন, কেবল লাইন বসানোর কাজ সেটা। ঠিকাদারি সংস্থায়। ওয়াকিলের দলের কেউ ১০ বছর ধরে এই কাজ করছেন। কেউ বা বছর ২০। কিন্তু এমন প্রাণ বাঁচানোর কাজ কখনও করেননি দলের কেউ। এবারই প্রথম ডাক পেলেন তারা।
ওয়াকিল বলছিলেন, '৪১ জনের জীবন ওখানে আটকে আছে ভেবে আমাদের মধ্যে এমন একটা জেদ চেপে গিয়েছিল যে, কোনো না কোনোভাবে ওদের বাঁচিয়ে আনার সংকল্প নিয়েছিলাম প্রত্যেকে। টিমের মধ্যে কারও এই ধরনের প্রাণ বাঁচানোর কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। এত দিনের মধ্যে সব থেকে চ্যালেঞ্জিং কাজ। দেশের জন্য কিছু করার একটা সুযোগ পেয়েছি, এটা ভেবেই করলাম। যুদ্ধটা জিতলামও।
জানা যায়, আটকে পড়াদের উদ্ধারে প্রথমে অ্যাক্সকেভেটর দিয়ে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরু হয়। এরপর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা হয় আমেরিকান অগার ড্রিলিং মেশিন। এ মেশিন দিয়ে ৬০ মিটার লম্বা পাইপ বসানোর কাজ চলছিল। কিন্তু গত শুক্রবার প্রায় ৪৫ মিটার অংশে পাইপ বসানোর পর মেশিনটি ভেঙে যায়। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হাত দিয়ে উদ্ধার অভিযান সম্পন্ন করা হবে। ডাকা হয় ‘র্যাট-হোল’ মাইনারদের। আর এই র্যাট-হোল মাইনাররাই নিজেদের হাত ব্যবহার করে বাকি কাজটি সম্পন্ন করে শ্রমিকদের কাছে পাইপ পৌঁছে দেন। পরবর্তীতে সেই পাইপের মধ্য দিয়ে বিশেষ চাকাচালিত স্ট্রেচারে করে শ্রমিকদের টেনে টেনে বের করা হয়।
যে ‘র্যাট-হোল’ মাইনিং কৌশল ব্যবহার করে শ্রমিকদের উদ্ধার করা হয়েছে সেটি ভারতে ২০১৪ সাল থেকে নিষিদ্ধ রয়েছে। এই নিষিদ্ধ কৌশল ব্যবহার করেই আটকে পড়াদের উদ্ধার সম্ভব হয়েছে।
র্যাট-হোল মাইনিং হলো একটি কৌশল। যেটির মাধ্যমে খুবই ছোট গর্ত দিয়ে কয়লা উত্তোলন করা হয়। গর্তগুলো চওড়ায় সর্বোচ্চ ৪ ফুট হয়। যখন মাইনাররা ভূগর্ভস্থ কয়লাস্তরে পৌঁছান তখন কয়লা উত্তোলনের জন্য এই টানেল তৈরি করা হয়।
কয়লা উত্তোলন করে সেগুলো পাশে কোনো এক জায়গায় জড়ো করা হয়। পরে মহাসড়ক দিয়ে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়। র্যাট-হোল কৌশলে মাইনাররা মাইনের ভেতর প্রবেশ করেন এবং হাতে ধরা সরঞ্জামাদি দিয়ে গর্ত খুঁড়ে কয়লা নিয়ে আসেন। ভারতের মেঘালয় রাজ্যে কয়লা উত্তোলনে এটি খুবই সাধারণ ও ব্যাপক ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি। মেঘালয়ে ভূগর্ভস্থ কয়লার স্তর খুবই পাতলা। এছাড়া অন্যান্য পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন লাভজনকও হয় না। এ কারণে সেখানে এ কৌশল ব্যবহার করা হয়।