আজ বাঙালি জাতি একুশের চেতনা ভুলে দ্বিধা বিভক্ত - মনিরুজ্জামান মনির
নিজস্ব প্রতিবেদক
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, 6:56 PM
নিজস্ব প্রতিবেদক
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, 6:56 PM
আজ বাঙালি জাতি একুশের চেতনা ভুলে দ্বিধা বিভক্ত - মনিরুজ্জামান মনির
২১ ফেব্রুয়ারী/২২ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায়। মোঃ মনিরুজ্জামান মনির আজ একুশে ফেব্রুয়ারি। আমাদের বাঙালির মহান মাতৃভাষা দিবস। একুশে ফেব্রুয়ারি আজ কেবল বাঙালির মাতৃভাষা দিবস নয়, এটি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে ছাত্ররা মাঠে নামে। আন্দোলনরত ছাত্রদের উপর পুলিশের গুলিতে অনেক তরুন শহীদ হন।
রফিক, জব্বার, শফিউল, সালাম, বরকতসহ অনেকেই শহীদ হন। তাই এ দিনটি ইতিহাসে শহীদ দিবস হিসেবেও সমধিক পরিচিত। ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা- ইউনেস্কো এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এতে আজ সারাবিশ্ব ভাষার জন্য আমাদের ত্যাগ, আন্দোলন ও সংগ্রাামের সাথী।
প্রতিবছর সারা বিশ্বে এ দিবসটি গুরুত্বসহকারে পালিত হয়।কোন নির্দিষ্ট দিন, কোন মহৎ দিন কখনো কখনো জাতীয় জীবনে যুগান্তরের সম্ভাবনা নিয়ে আসে। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় ইতিহাসে তেমনি একটি দিন। বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার স্মৃতি চিহ্নিত দিন। এ দিনটি সংগ্রামের আগুনে জলন্ত। এ দিনটি রক্তাক্ত আত্মত্যাগের মহিমায় ভাস্বর। এ দিনটি ইতিহাসের কোন বিবর্ন তারিখ নয়।
এ দিনটি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের প্রতি মূহুর্তে গতিময়, প্রাণবন্ত এবং তাৎপর্যপূর্ণ দিন। একুশ আমাদের যাত্রা পথের তোরণদ্বার। একুশ আমাদের মাতৃভাষার অহংকার। একুশ আমাদের ন্যায্য ও সত্য দাবীর বহিঃপ্রকাশ। একুশ বঙালি জাতির জীবন্ত ইতিহাস। একুশের চেতনা আমাদের স্বাধীনতার আন্দোলনের এক অবিনাশী শক্তি।
বাঙালির মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে তৎকালীন পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণ দাবির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এই আন্দোলন বাংলার ছাত্রসমাজ বুকের রক্ত দিয়ে রঞ্জিত করেছিল ঢাকার রাজপথ। পরবর্তীতে এর ফলাফল ছিল সুদূর প্রসারী।
একুশের চেতনা তাই আমাদের জাতীয় জীবনের বীজমন্ত্র। আন্দোলন-সংগ্রামের উদ্ভব হয়েছিল, তার শপথ গৃহীত হয়েছিল একুশের চেতনায়। বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই পূর্ব বাংলার অধিকার-বঞ্চিত মানুষগুলোর প্রথম সংগঠিত সংগ্রামের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। চুয়ান্ন’র নির্বাচন, বাষট্টি’র শিক্ষা আন্দোলন, ছয়-দফা, উনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান এবং স্বাধীনতাযুদ্ধসহ সকল আন্দোলন সংগ্রামে প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে এই একুশে। এই একুশের চেতনাই পরিনতি লাভ করেছিল স্বাধীনতা লাভের নিরঙ্কুশ বিজয়ে। আজ বাঙালি জাতি একুশের চেতনা ভুলে গিয়ে দ্বিধা বিভক্ত। ফলে অনেক অর্জন বিভিন্ন সময়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমি বিশ্বাস করি, একুশের দৃঢ় প্রত্যয় আমাদের সহায়ক শক্তি। “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো/ একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি তোমাকে ভুলিতে পারি”। আমরা ভুলিতে পারি না। ভুলবো না।
কোন অন্যায় আমরা মানি না। কোনো অপশক্তি আমাদের ‘দাবায়ে রাখতে পারবে না’। আসুন, বাঙালি জাতয়ীতাবাদের ভিত্তিতে একুশের চেতনায় সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলি। একুশের চেতনায় উজ্জীবিত হই। একুশ আমাদের শিখিয়েছে- মাথানত না করা। একুশ আমাদের শিখিয়েছে দেশকে ভালোবাসতে। একুশ আমাদের শিখিয়েছে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধিতে কাজ করতে। দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে।
আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশে একুশে ফেব্রুয়ারি হাজার তারের এক বীনা। তাতে কত না সুর, কত না ঝংকার। একুশের এ বীনায় ঝংকৃত হয়েছে আমাদের ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি। আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশে একুশ একাধারে ইতিহাস ও ঐতিহ্যি, গৌরগাঁথা ও প্রেরণা। তাই বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশের ক্ষেত্রে একুশের ভূমিকা অপরিসীম। বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলনের শহীদদের রক্ত বৃথা যায়নি।
আমরা মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দিতে পেরেছি। একুশের পথ ধরেই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি।