জঙ্গি ছিনতাই পরিকল্পনায় মেজর জিয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক
২১ নভেম্বর, ২০২২, 11:36 AM
নিজস্ব প্রতিবেদক
২১ নভেম্বর, ২০২২, 11:36 AM
জঙ্গি ছিনতাই পরিকল্পনায় মেজর জিয়া
নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার কমান্ডার সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়ার পরিকল্পনায় আদালত থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। পালাতে না পারা অন্য জঙ্গিরা জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য জানিয়েছে।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) প্রসিকিউশন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেয়ার জন্য ১৬-১৮ জনের দুটি টিম কাজ করেছে আদালত থেকে ছিনিয়ে নিতে না পারা দুই জঙ্গি আরাফাত রহমান ও আব্দুর সবুর রাজু ওরফে সুজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানান।
রোববার দুপুরে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় প্রসিকিউশন বিভাগ ডিএমপি কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেছে। এজাহারে পরিদর্শক জুলজাস উদ্দিন আকন্দ উল্লেখ করেন, জঙ্গি আরাফাত রহমান ও আব্দুর সবুর রাজু প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনায় গুরুত্বপূর্ন তথ্য দিয়েছেন। পলাতক জঙ্গি মেজর জিয়ার পরিকল্পনা মোতাবেক আদালতের কার্যক্রম শেষে পুলিশের উপর আক্রমণ করে চারজনকে ছিনিয়ে নিতে হবে বলে নির্দেশ ছিল। দুজন পালাতে পারলেও অন্যরা আটকে যান। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দুটি মোটরসাইকেলে ৫-৬ জন এবং কোর্ট এলাকায় ১০-১২ জন আনসার আল ইসলামের সদস্য অবস্থান নেন।
পরিদর্শক জুলজাস উদ্দিন আকন্দ বলেন, সিটিটিসিসহ সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলো প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছে।
জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফীন দীপন হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আদালতে আনার পর রোববার দুপুর ১২টার দিকে পুলিশের চোখমুখে গ্যাস স্প্রে করে পালান নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের দুই সদস্য।
ঘটনার পর সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘কোর্টে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। কয়েকজন জঙ্গি সদস্যের হাজিরা ছিল। কোর্ট থেকে হাজতখানায় নেয়ার পথে অন্য সহযোগীদের সহযোগিতায় দুই জঙ্গি পালিয়ে গেছে। দুজনই আনসার আল ইসলামের সদস্য। তাদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে ডিএমপি, ডিবি, সিটিটিসিসহ পুলিশের অন্যান্য ইউনিট।’
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর রোববার রাত সাড়ে ৮টায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, আদালত প্রাঙ্গণ থেকে আসামি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় সন্ত্রাস দমন আইনে কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। মামলার আসামি করা হয়েছে ২০ জনকে।
গতকাল রোববার দুপুর ১২টার দিকে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের চোখে পিপার স্প্রে দিয়ে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তারা হলেন দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব। পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়েছে। সীমান্তে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে।
জঙ্গিরা পালিয়ে যাওয়ার পর ঘটনাস্থল ও আশপাশ থেকে একটি মোটরসাইকেল, একটি লোহার কাটার, ৬৯ টি বিভিন্ন সাইজের নাটবল্টু, নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প, হোন্ডার সার্ভিস ও ওয়ারেন্টি বুকলেট উদ্ধার হয়েছে।
সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেপ্তার জঙ্গিরা কারাগারে ছিল। তাদের কাছে পলাতক জিয়ার পরিকল্পনা ও নির্দেশনা কিভাবে পৌঁছেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আদালতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, মোহাম্মদপুর থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলাটিতে রোববার অভিযোগ গঠন হয়। এ জন্য জামিনে থাকা দুই আসামি হাজিরা দেন আদালতে। আর কাশিমপুর কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে ১২ আসামিকে আনা হয়।
ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান শুনানি শেষে ২০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এরপর আসামিদের আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশের উপর আক্রমণ করে দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা।
সিটিটিসির এক কর্মকর্তা বলেন, কোর্টের শুনানি শেষে প্রথমে চারজনকে নিচে নামিয়ে আনা হয়। দুটি হাতকড়া দিয়ে দুই-দুইজনকে আটকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। বাকি আসামিরা তখন ওপরে ছিলেন।
তিনি বলেন, চারজনের মধ্যে মইনুল হাসান ও আবু সিদ্দিককে জঙ্গিরা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তবে মো. আরাফাত ও মো. সবুরকে নিতে পারেনি। জঙ্গিরা পিপার স্প্রে ব্যবহার করে। এতে একজন সিকিউরিটি গার্ড, একজন পুলিশ সদস্যসহ কয়েকজন সাধারণ মানুষ আক্রন্ত হন।
জঙ্গি পালানোর এ ঘটনায় আলোচনায় আসা মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক একটি ব্যর্থ অভ্যুত্থানের চেষ্টায় ২০১২ সালে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হন। এই অভ্যুত্থান চেষ্টায় জড়িত থাকায় দুই সেনা কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হলেও পালিয়ে যান জিয়া। এরপর তিনি যুক্ত হন জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে, পরে যেটির নামকরণ করা হয় আনসার আল ইসলাম।
এরপর মেজর (বহিষ্কৃত) জিয়ার পরিকল্পনা ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ঘটে একের পর এক হত্যাকাণ্ড। আনসার আল ইসলামের বেশিরভাগ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হলেও এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে তিনি। এরইমধ্যে কয়েকটি মামলায় তার ফাঁসির আদেশ হয়েছে। সর্বশেষ জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার এ ঘটনাতেও তার নাম উঠে এসেছে আলোচনায়।