ঢাকা ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম
বাংলাদেশি ঠেকানোর যুদ্ধে নেমেছে ইতালির এক শহর বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রাকের পেছনে বাসের ধাক্কা, বাবা-ছেলেসহ নিহত ৩ মিয়ানমারে জান্তার বিমান হামলায় নিহত ১১ ‘৭ দিন থাকি মরণের তিস্তার ভাঙন শুরু হইছে, কেউ আসি দেখিল না’ রদ্রিগোর গোলে ইকুয়েডরকে হারাল ব্রাজিল দুপুরের মধ্যে আট অঞ্চলে ঝড়ের আভাস কুমিল্লায় মাইক্রোবাসের পেছনে বাসের ধাক্কায় শিশুসহ নিহত ৪ শাজাহান খান গ্রেপ্তার, চলছে জিজ্ঞাসাবাদ গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ১৭ ফিলিস্তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘শহীদি মার্চ’ আজ

জুড়ীতে আরমান খুনের নেপথ্যে জুয়ার টাকা

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ জুন, ২০২৪,  2:27 PM

news image

মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে  আরমান (২২) নামে এক যুবক খুনের  ঘটনা নিয়ে পুরো এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। খুনের পর থেকে ঘটনার মূল বিষয় নিয়ে ভয়ে মুখে কোলপ এটেছেন এলাকাবাসী। জুয়ার টাকার ভাগাভাগি নিয়ে খুনের ঘটনা ঘটলেও মূল ঘটনাকে আড়াল করতে একটি চক্র উঠেপড়ে লেগেছে। তবে নিহত আরমান জুয়ারিদের বলির পাঠা হয়েছেন এমন কথা এলাকাবাসীর মুখে মুখে এখন ওপেন সিক্রেট।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকে উপজেলার জায়ফরনগর  ইউনিয়নের গরেরগাঁও গ্রামটি বিভিন্ন অপরাধের অভয়াশ্রম। এই গ্রাম মদ, জুয়া,  ইয়াবা, হিরোইন, ফেনসিডিল ও গাঁজাসহ নানা মাদক সেবনের নিরাপদ জায়গা হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে রাত হলেই বসে নেশা ও  জুয়ার আসর। জুয়া ও মাদককে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় অপরাধমূলক নানা ঘটনা ঘটছে হরহামেশায়‌। তবে দীর্ঘদিন থেকে এই গ্রামে স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে চলছে বিশাল জুয়ার আসর। বেশ কয়েকবার পুলিশ ও ডিবির অভিযানে জুয়ারি ও মাদক সেবীরা আটক হলেও কোনভাবেই থামেনি এই জুয়ার আসর। যারাই জুয়া ও মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলেন তাদের উপর নেমে আসে অত্যাচারের স্টিম রোলার। এ গ্রামে জুয়া খেলা এখন ক্লাবে পরিণত হয়েছে। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, গরেরগাঁও গ্রামের যুবলীগ নেতা নেতা সাইফুর রহমান, ডাঃ মনিরুল ইসলাম, সাংবাদিক হারিছ মোহাম্মদ, সিএনজি চালক রফিক মিয়া সহ স্থানীয় ১০/১৫  জনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র এই জুয়ার আসরটি নিয়ন্ত্রণ করছে। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় থানার ওসিকে ম্যানেজ করে তারা প্রতিদিনই  বসাচ্ছে জুয়ার আসর। 

এদিকে গরেরগাঁও গ্রামের ইয়াজ মিয়ার ছেলে তানভীর আহমেদ নিয়মিত চাঁদা পান ওই আসর থেকে। সম্প্রতি সময়ে তানভীরকে জুয়ার আসর থেকে চাঁদা দেওয়া বন্ধ করে দেন  আসর নিয়ন্ত্রণকারীরা। এতে করে ক্ষিপ্ত হন তানভীর। গত শনিবার (২২ জুন) রাতে চাঁদার টাকার জন্য জুয়ার আসরে যায় তানভীর‌। এসময়  আসর নিয়ন্ত্রণকারী যুবনেতা সাইফুর রহমান, ডাঃ মনিরুল ইসলাম, সাংবাদিক হারিছ মোহাম্মদ ও  সিএনজি চালক রফিক মিয়ার সাথে তানভীরের কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ওই খান থেকে বেরিয়ে আসে তানভীর। পরে তানভীর রাত সাড়ে ১১টা থেকে জুয়ার আসর সংলগ্ন রাস্তায় অবস্থান নেয়। রাত সাড়ে বারোটায় জুয়ার আসর শেষে সবাই বেরিয়ে আসলে আসর নিয়ন্ত্রণকারী যুবনেতা সাইফুর রহমান, ডাঃ মনিরুল ইসলাম, সাংবাদিক হারিছ মোহাম্মদ ও  সিএনজি চালক রফিক মিয়ার সাথে আবারো চাঁদা দেওয়ার জন্য হুমকি দমকি দেন তানভীর। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। হাতাহাতির একপর্যায়ে তানভীর রফিক মিয়ার পেটে ছুরিকাঘাত করেন। তখন রফিককে  ফেলে বাকিরা পালিয়ে যান। রফিকের আত্মচিৎকারে পাশের ঘরের প্রবাসী সুমন মিয়ার ছেলে আরমান বেরিয়ে আসে। তানভীরের হাত থেকে রফিক মিয়াকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে তানভীর আরমানের বুকে ছুরিকাঘাত করে। পরে স্থানীয়রা আরমান ও রফিক মিয়াকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আরমান কে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত রফিক মিয়াকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে  সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে জুড়ী থানা পুলিশ রাতেই অভিযান চালিয়ে চারজনকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলেন- উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের গরেরগাঁও গ্রামের মৃত চান মিয়ার ছেলে ইয়াজ মিয়া (৫০), তার দুই ছেলে তানভীর আহমেদ (২৫) ও তুহিন আহমেদ (১৬) এবং মৃত চেরাগ আলীর ছেলে তাজ উদ্দিন (৫৫)।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান, মূল ঘটনাকারী তানভীর হলেও নিরপরাধ তানভীরের বাবা ইয়াজ উদ্দিন, তার ভাই তুহিন ও একই গ্রামের মৃত চেরাগ আলীর ছেলে তাজ উদ্দিনকে আসামি করে ফাঁসানো হয়েছে তাদেরকে। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিরপরাধ মানুষকে ফাঁসানোর নামে লক্ষ লক্ষ টাকা পুলিশের সহায়তায় লুটে নিচ্ছে ওই জুয়ার আসর নিয়ন্ত্রণকারীরা। তবে হত্যাকাণ্ডের রাতে হাসপাতালে থাকা অবস্থায় রফিক মিয়া পুলিশের কাছে দেওয়া বক্তব্যে বলেন তানভীরের সাথে টাকা নিয়ে ঝামেলায় তানভীর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।  রফিক পুলিশের কাছে একজনের নাম বললেও এ মামলায় নিরীহ মানুষকে ফাঁসানোর কারণে এলাকায় এ নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রফিকুল ইসলাম বলেন, একেক জন একেক কথা বলছে। তবে খুনের ঘটনার সময় আহত ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তার চিকিৎসা শেষ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে  মূল ঘটনাটি জানা যাবে। 

জুড়ী থানার ওসি এসএম মাইন উদ্দিন বলেন, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বেই আরমান খুনের ঘটনা ঘটেছে। তবে কি নিয়ে দ্বন্দ্ব  বা কিসের টাকার লেনদেন তা নিশ্চিত করতে পারেননি  ওসি মাইন উদ্দিন। 

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার মো. মনজুর রহমান বিপিএম, পিপিএম (বার) বলেন, খুনের ঘটনাটি  জানি, তবে জুয়ারীদের  হামলায়  আরমান খুন  হয়েছে  এমন বিষয়ে এখন পর্যন্ত  আমাদের নলেজে নেই। তবে বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব।

logo
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: মনিরুজ্জামান মনির