দেশি পেঁয়াজে এখনও ঝাঁজ ব্রয়লার ২০০
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৬ জুন, ২০২৩, 12:15 PM
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৬ জুন, ২০২৩, 12:15 PM
দেশি পেঁয়াজে এখনও ঝাঁজ ব্রয়লার ২০০
আমদানির পরও উচ্চ দরে স্থির হয়ে আছে দেশি পেঁয়াজের বাজার। যদিও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমতির দিকে। এদিকে আবারও ২০০ টাকা ছুঁয়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। দু-তিনটি ছাড়া বেশিরভাগ সবজি ৬০ টাকার ঘরে রয়েছে। গতকাল ঢাকার কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও কলোনি বাজার ও হাতিরপুল কাঁচাবাজারে গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
মাত্র দু’মাস আমদানি বন্ধ থাকায় পেঁয়াজের বাজার বেশ চড়েছিল। তবে সরকার আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর প্রতিদিনই কমবেশি পেঁয়াজ আসছে ভারত থেকে। তবু কমেনি দেশি পেঁয়াজের দাম। আমদানি শুরুর পর দুই ধাপে কমে যেখানে এসেছিল, এক সপ্তাহ ধরে সেখানেই আটকে আছে দাম।
কোনো কোনো বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৭০, কোথাও ৭৫, আবার কোথাও ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহেও একই দর ছিল।
এ ছাড়া ভারতীয় ভালো মানের পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫৫ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। তবে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের মান খুব একটা ভালো দেখা যায়নি। বিক্রেতারা এ ধরনের পেঁয়াজের কেজি ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ-রসুন বিক্রেতা ফারুক হোসেন বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজের বেশিরভাগই পচা। সেগুলো কম দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বেশি। এ কারণে খুব একটা কমেনি দেশি পেঁয়াজের দর।
এদিকে বাজারে আসতে শুরু করেছে নতুন নির্ধারিত কম দামের ভোজ্যতেল। খুচরা ব্যবসায়ীরা বোতলজাত এক লিটার ১৮৯ এবং পাঁচ লিটার ৯২০ টাকায় বিক্রি করছেন। আর খোলা সয়াবিন ১৬৭ এবং পাম তেলের লিটার ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কোনো কোনো বাজারে আগের বেশি দামের বোতলই নতুন কম দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। রাজধানীর কলোনি বাজারের হানিফ স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. হাবীব বলেন, ‘কোনো কোনো ডিলারের কাছে আগের বেশি দামের তেল রয়ে গেছে। তারা সেগুলো নতুন রেটে দিচ্ছে। আমরাও সেগুলো নতুন কম দরেই বিক্রি করছি।’
ভোজ্যতেলের দাম কমার খবর থাকলেও বরাবরের মতোই অস্থিরতা চিনির বাজার। মাস খানেক আগে সরকার খোলা চিনি ১২০ এবং প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল।
আমদানিকারক থেকে খুচরা ব্যবসায়ী– কেউই মানেনি এ দর। আমদানি করা প্রতি কেজি সাদা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে। এর মধ্যে আবারও দাম বাড়ানোর জন্য চিঠি দিয়েছে আমদানিকারকরা। গত সপ্তাহে তারা খোলা চিনি কেজিতে ২০ এবং প্যাকেট চিনি কেজিতে ২৫ টাকা বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে চিঠি দিয়েছে। যদিও এখনও এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি কমিশন। এরই মধ্যে কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে দেশি চিনির দাম। এ ধরনের চিনির দাম গত সপ্তাহে ছিল ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা দরে।
দাম বেশি হওয়ায় খুচরা বিক্রেতাদের কেউ কেউ চিনি বিক্রি করছেন না। কারওয়ান বাজারের ফরিদগঞ্জ স্টোরের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্যাকেট চিনির দর লেখা আছে ১২৫ টাকা। ডিলারদের থেকে ১২৫ টাকা দরেই কিনতে হয়। এর সঙ্গে বাধ্যতামূলক আধা কেজি গুঁড়া দুধ বা অন্য কিছু কিনতে হয়। এ কারণে চিনি বিক্রি বাদ দিয়েছি।’
তবে গত সপ্তাহের চেয়ে ব্রয়লার মুরগির দাম বেশ বাড়তি। রোজা শুরু হওয়ার পর ধাপে ধাপে বেড়ে ২০০ থেকে ২১০ টাকায় উঠেছিল ব্রয়লারের দাম। ধীরে ধীরে কমে গত সপ্তাহে ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হয়েছিল ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। এখন বেশিরভাগ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। যদিও দর কষাকষির মাধ্যমে বিক্রেতাদের কেউ কেউ কেজিতে ৫ টাকা ছাড় দিচ্ছেন। সোনালি জাতের মুরগিতে তেমন বদল হয়নি। আগের মতোই কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৯০ টাকায়। গত সপ্তাহের মতো ডিমের ডজনও ১৪০ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।
তেজকুনিপাড়া মায়ের দোয়া স্টোরের স্বত্বাধিকারী হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘মাঝে কিছুদিন কমেছিল ব্রয়লারের দাম। তিন-চার দিন ধরে আবার বেড়েছে পাইকারি বাজারে। এ কারণে আমাদের কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
এদিকে চালের বাজারে তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি। সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, বাজারে সরু চালের কেজি ৬০ থেকে ৭৫, মাঝারি চাল ৫০ থেকে ৫৫ এবং মোটা চালের কেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে সবজির বাজার কিছুটা নিম্নগতি। তিন-চারটি ছাড়া বেশিরভাগ সবজি মিলছে ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। তবে গাজর কিনতে গুনতে হবে কেজিতে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। কচুরমুখী পাওয়া যাচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। মৌসুম শেষ হয়ে আসায় বাড়তে শুরু করেছে টমেটোর দাম। গত সপ্তাহে টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭৫ টাকা। ভালো ফলনের পরও মাস খানেক আলুর দাম ছিল চড়া। কেজি বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা দরে। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৪ থেকে ৩৬ টাকায়।