নিউমার্কেট খুলতে না দেয়ার ঘোষণা ঢাকা কলেজে শিক্ষার্থীদের
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৯ এপ্রিল, ২০২২, 12:45 PM

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৯ এপ্রিল, ২০২২, 12:45 PM
নিউমার্কেট খুলতে না দেয়ার ঘোষণা ঢাকা কলেজে শিক্ষার্থীদের
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (১৮ এপ্রিল) রাত ১২টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। উত্তেজনা চলে ভোর পর্যন্ত। এ ঘটনার জের ধরে নিউমার্কেট খুলতে না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এর আগে সংঘর্ষের শুরুর দিকে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা শুরু করে। এ সময় উভয়পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা ব্যর্থ হলে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ছোড়ে পুলিশ। একপর্যায়ে সংঘর্ষ থামলেও নিউমার্কেট এলাকাজুড়ে রাতভর উত্তেজনা বিরাজ করে।
পুলিশের ধাওয়ায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার পর রাত আড়াইটার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা আবারো ঐক্যবদ্ধ হয়ে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে আসেন। এ সময় তারা পুলিশের মুখোমুখি অবস্থান করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শুরু করেন। শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে তাদের অনেকেই আহত হয়েছেন।
ঢাকা কলেজের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহবুব জানান, আমাদের তিন বড় ভাই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। একজন আইসিইউতে আছেন। আরো কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আমরা এটির প্রতিকার চাই। বড় ভাইয়েরা নির্দেশ দিয়েছেন, এ ঘটনার শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত কাল আমরা নিউমার্কেট খুলতে দেব না।
ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে এই শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের তিন বন্ধু নিউমার্কেটে খেতে গিয়েছিল। এ সময় দোকানে থাকা কর্মচারীরা তাদের মারধর শুরু করে। পরে আমরা গিয়ে তাদের প্রতিহত করি। এরপর থেকেই ঝামেলার শুরু।
শিক্ষার্থীদের অনেকেই অভিযোগ করেন, পুলিশ যখন তাদের দিকে দিকে টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করছিল তখন ব্যাবসায়ীরাও তাদের পাশে ছিল। পুলিশ-ব্যবসায়ী এক হয়ে আমাদের দিকে আক্রমণ করেছে। অথচ ব্যবসায়ীদের বাধা দেয়া উচিত ছিল।
সার্বিক বিষয়ে রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আমরা জানতে পেরেছি ঢাকা কলেজের কয়েকজন ছাত্র নিউমার্কেটে যায়। যে দোকানে তারা গিয়েছিল ওই দোকানের কর্মচারীর সঙ্গে তাদের তর্ক হয়। শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, ওই কর্মচারী তাদের গায়ে হাত তোলে। পরে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য দলবল নিয়ে নিউমার্কেট এলাকায় আসে। এ সময় তারা প্রথমে নিউমার্কেটের ৪নং গেট ও পরে ২নং গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। ২নং গেট ভেঙে ভেতরে কয়েকজন ঢুকেও পড়ে। পরে আমরা তাদের বুঝিয়ে হল ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করি। আমাদের অনুরোধ শুনে তারা ফিরেও যায়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা রাস্তায় চলে আসার কারণে তাদের মধ্যে মুখোমুখি অবস্থার সৃষ্টি হয়।
শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কোনো রাবার বুলেট নিক্ষেপ করিনি। আমরা শুধু টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছি। আমাদের বাহিনীকে সেরকমই নির্দেশ দেয়া ছিল।
আইনি ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হয়েছে অবশ্যই আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।
মার্কেট খুলতে না দেয়ার দাবির বিষয়ে ডিসি সাজ্জাদ রহমান বলেন, এটা রমজান মাস। রমজানের শেষ দশক চলে এসেছে। এখন দোকানপাট বন্ধ রাখার দাবি কোনো বিবেচনাপ্রসূত কাজ নয়। ঢাকা কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা বলেছেন, তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলবেন। যদি কোনো সমঝোতার প্রয়োজন হয় তাহলে সেটি তারা করবেন। মার্কেটের সাথে দ্বন্দ্ব নিরসনের উদ্যোগ নেবেন। কিন্তু মার্কেট খুলতে না দেয়ার বিষয়টি যথাযথ সিদ্ধান্ত নয়।
পুলিশর সঙ্গে ব্যবসায়ীরাও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় অংশ নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি নিছকই দাবি। সত্য নয়।
এ সময় সংঘর্ষে আহতের প্রকৃত সংখ্যাটি জানাতে পারেননি ঘটনাস্থলে উপস্থিত কেউই।
রাত সোয়া তিনটায় ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ এবং হলের প্রাধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে তাদের কলেজ ক্যাম্পাসের দিকে নিয়ে যান।