প্রশ্নফাঁস: সেই আবেদ আলীর জামিন মেলেনি
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৩ আগস্ট, ২০২৪, 1:03 PM
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৩ আগস্ট, ২০২৪, 1:03 PM
প্রশ্নফাঁস: সেই আবেদ আলীর জামিন মেলেনি
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (বিপিএসসি) প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় করা মামলায় পিএসসির গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (১২ আগস্ট) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে তার আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেন। এর আগে গত ১১ জুলাই ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে আসামিদের আইনজীবীরা জামিন চেয়ে শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
তারও আগে গত ৯ জুলাই আবেদ আলীসহ গ্রেফতার ১৭ আসামিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এসময় আবেদ আলীসহ ছয়জন ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। তবে, পিএসসির উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর ও মো. জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবিরসহ ১১ জনকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা হক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
কারাগারে যাওয়া অন্য আসামিরা হলেন- পিএসসির সদস্যের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীর ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম, সাবেক সেনা সদস্য নোমান সিদ্দিকী, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী শাহাদাত হোসেন, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত মো. মামুনুর রশীদ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান মো. নিয়ামুন হাসান ও ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী বর্তমানে মিরপুরের ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মো. সোহেল।
প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় করা মামলায় পিএসসির গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ ছয়জন দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্যরা হলেন- পিএসসির অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান, অফিস সহায়ক (ডিসপাস) সাজেদুল ইসলাম, ব্যবসায়ী সহোদর সাখাওয়াত হোসেন ও সায়েম হোসেন এবং বেকার যুবক লিটন সরকার।
গত ৮ জুলাই রাজধানীর পল্টন থানায় এ আইনের ১১/১৫ ধারায় মামলা করেন সিআইডির উপ-পরিদর্শক নিপ্পন চন্দ্র দাস। মামলায় সৈয়দ আবেদ আলীসহ ৩১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আসামি আরও ৫০ থেকে ৬০ জন। অভিযোগ প্রমাণ হলে আবেদ আলীসহ আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে ১০ বছরের কারাদণ্ড। মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, আসামিরা সংঘবদ্ধ চক্র হিসেবে বিগত বছরগুলোতে বিসিএসসহ পিএসসির বিভিন্ন গ্রেডের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র টাকার বিনিময়ে ফাঁস করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা এ তথ্য স্বীকার করেছেন। এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, চক্রটি বাংলাদেশ রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (নন ক্যাডার) সহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগে অবৈধ উপায়ে সংগ্রহ করেন। এরপর সেগুলো অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করেন। গ্রেফতার আসামিরাসহ জড়িত অন্যরা বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন আইন, ২০২৩ এর ১১/১৫ ধারার অপরাধ করেছেন বিধায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
মামলায় আবেদ আলী ও তার ছেলেসহ গ্রেফতার দেখানো হয়েছে ১৭ জনকে। তারা হলেন, পিএসসির উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর ও মো. জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির, অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান ও অফিস সহায়ক (ডিসপাস) সাজেদুল ইসলাম। এছাড়াও রয়েছেন- সাবেক সেনাসদস্য নোমান সিদ্দিকী, ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী বর্তমানে মিরপুরের ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মো. সোহেল, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী শাহাদাত হোসেন, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত মো. মামুনুর রশীদ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিকেল টেকনিশিয়ান মো. নিয়ামুন হাসান, ব্যবসায়ী সহোদর সাখাওয়াত হোসেন ও সায়েম হোসেন এবং বেকার যুবক লিটন সরকার।
মামলার পলাতক আসামিরা হলেন- পিএসসির প্রাক্তন সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়, মো. শরীফুল ইসলাম, দীপক বণিক, খোরশেদ আলম খোকন, কাজী মো. সুমন, একেএম গোলাম পারভেজ, মেহেদী হাসান খান, গোলাম হামিদুর রহমান, মিজানুর রহমান, আতিকুল ইসলাম, এটিএম মোস্তফা, মাহফুজ কালু, আসলাম ও কৌশিক দেবনাথ।
প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য সামনে আসার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সৈয়দ আবেদ আলীর বিপুল সম্পদের তথ্য তুলে ধরছেন নেটিজেনরা। তার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা (বহিষ্কৃত), পড়েছেন বিদেশে। এরপর দেশের একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ঢাকায় দুটি বহুতল ভবন রয়েছে আবেদ আলীর, মাদারীপুরেও রয়েছে আলিশান বাড়ি। এমনকি চেয়েছিলেন নতুন উপজেলা ডাসারের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে। এ লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারণাও শুরু করেন। এছাড়া সমাজের বিত্তবান ও প্রভাবশালীদের সঙ্গে নিয়মিত চলাফেরা করতেন আবেদ আলী। প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গেও ছিল ওঠাবসা। এক বেসরকারি টেলিভিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পিএসসির কোনো নিয়োগ পরীক্ষা এলেই প্রশ্নফাঁস করে অর্থ লোপাটে মেতে উঠতো চক্রটি। সংঘবদ্ধ এ চক্র গত ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলীর নিয়োগ পরীক্ষাকে বেছে নেয়। এ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস করে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।