বাংলাদেশকে কোন খাতে কত ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
নিজস্ব প্রতিবেদক
০২ মে, ২০২৩, 2:56 PM
নিজস্ব প্রতিবেদক
০২ মে, ২০২৩, 2:56 PM
বাংলাদেশকে কোন খাতে কত ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ২২৫ দশমিক ৩৪৫ কোটি মার্কিন ডলারের পাঁচটি চুক্তি সই হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক এ অর্থায়ন চুক্তিগুলোতে স্বাক্ষর করেন।
বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতি ডলার ১০৭ টাকা হলে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২৪ হাজার ১১১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এসময় বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাসকে পদ্মা সেতুর একটি বাঁধাই করা ছবি উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (১ মে) ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক সদর দপ্তরে সংস্থাটির প্রেসিডেন্টের হাতে ছবিটি তুলে দেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংক অংশীদারিত্বের ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষ্যে এ দিন সকাল থেকে বিশ্বব্যাংক সদর দপ্তরে বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন ওয়াশিংটন সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঋণের শর্ত : বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) বাংলাদেশসহ গরিব ও নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশকে স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে থাকে। পাঁচটি ঋণের মধ্যে চারটি ঋণের অর্থ সম্পূর্ণরূপে রেগুলার আইডিএ হিসেবে পাওয়া যাবে। তবে গ্রিন ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স ডেভেলপমেন্ট ক্রেডিট (জিসিআরডি) শীর্ষক প্রোগ্রামের আওতায় ৫০ কোটি ডলার ঋণের ১৭ দশমিক ৬ কোটি মার্কিন ডলার রেগুলার আইডিএ এবং বাকি ৩২ দশমিক ৮ কোটি মার্কিন ডলার শর্ট টার্ম ম্যাচিউরিটি লোন হিসেবে মিলবে।
রেগুলার আইডিএ ঋণের অর্থ পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। এ ঋণের উত্তোলিত অর্থের ওপর বার্ষিক ০ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ এবং ১ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। এছাড়া আনউইথড্রন ফাইন্যান্সিং ব্যালেন্স বা অনুত্তোলিত অর্থের ওপর বার্ষিক সর্বোচ্চ ০ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে কমিটমেন্ট ফি দিতে হবে। উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরসহ দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের জন্য বিশ্বব্যাংক কমিটমেন্ট ফি মওকুফ করেছে।
অন্যদিকে, শর্ট টার্ম ম্যাচিউরিটি লোনের অর্থ ছয় বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১২ বছরে পরিশোধ করতে হবে। এ ঋণের উত্তোলিত অর্থের ওপর কোনো সার্ভিস চার্জ ও সুদ প্রযোজ্য হবে না।
১৯৭২ সাল থেকে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের এখনও পর্যন্ত ৩৬৮টি প্রকল্প/কর্মসূচির অধীনে সর্বমোট ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ সহায়তা এবং ৭২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অনুদান চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাড়াতে মিলবে ৭৫ দশমিক ৩ কোটি ডলার
পণ্য পরিবহন ও যাত্রীদের সুবিধার্থে দেশের তিন স্থলবন্দরের অবকাঠামোর উন্নয়নে এগিয়ে এসেছে বিশ্বব্যাংক। স্থলবন্দরগুলো হলো– যশোরের বেনাপোল, সাতক্ষীরার ভোমরা ও লালমনিরহাটের বুড়িমারী। ‘অ্যাকসিলারেটিং ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ট্রেড কানেকটিভিটি ইন ইস্টার্ন সাউথ এশিয়া’ প্রকল্পের আওতায় এ উন্নয়নকাজ করা হবে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ৭৫ দশমিক ৩ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বেনাপোল, বুড়িমারী ও ভোমরা স্থলবন্দরের সামগ্রিক সক্ষমতা বাড়বে, যা বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও ভুটানের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যকে আরও প্রসারিত করবে।
বন্যাঝুঁকি কমাতে দেবে ৫০ কোটি ডলার
বন্যাঝুঁকি কমাতে ‘রেজিলেন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফর অ্যাডাপটেশন অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি রিডাকশন প্রকল্পের আওতায় ৫০ কোটি ডলার অনুদান দেবে বিশ্বব্যাংক। জানুয়ারি ২০২৩ থেকে জুন ২০২৮ মেয়াদে ১৪টি জেলার ৭৮টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। নদীতীরবাসী ও আকস্মিক বন্যাকবলিত এলাকার জনগোষ্ঠীর বন্যার ঝুঁকি কমানো এবং দুর্যোগ প্রস্তুতি ও সাড়া প্রদানে সক্ষমতা বাড়ানো প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য।
পরিবেশ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে ২৫ কোটি ডলার
‘বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন’ প্রকল্পে ২৫ কোটি ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাংলাদেশকে পরিবেশ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে সহায়তা করবে। প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে দূষণ সমস্যা মোকাবিলা করা যাবে। বৃহত্তর ঢাকা ও এর বাইরে বসবাসকারী দুই কোটির বেশি মানুষ উপকৃত হবে প্রকল্পের মাধ্যমে।
জিসিআরডি ফান্ড থেকে ৫০ কোটি ডলার পাচ্ছে বাংলাদেশ
গ্রিন ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স ডেভেলপমেন্ট ক্রেডিট (জিসিআরডি) শীর্ষক প্রোগ্রামের আওতায় ৫০ কোটি ডলার পাবে বাংলাদেশ। এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো সবুজ ও জলবায়ু সহনশীল উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা দেওয়া। অর্থ বিভাগ এ কার্যক্রমটির জন্য প্রধান বাস্তবায়নকারী সংস্থা। কিছু শর্ত প্রতিপালন সাপেক্ষে আগামী ৩০ জুন ২০২৪ তারিখের মধ্যে এ বাজেট সাপোর্টের অর্থ ছাড় করা হবে।
স্মার্ট পিকেএসএফ গঠনে মিলবে ২৫ কোটি ডলার
সাসটেইনেবল মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড রেজিলেন্ট ট্রান্সফরমেশন (স্মার্ট) প্রকল্পের আওতায় মিলবে ২৫ কোটি ডলার। প্রকল্পটির প্রধান উদ্দেশ্য জলবায়ু সহিষ্ণু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্ষুদ্র ব্যবসা কার্যক্রম প্রসারের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করা। পল্লী কর্ম সহায়ক সংস্থা (পিকেএসএফ) কর্তৃক প্রকল্পটি ২০২৩ থেকে ২০২৮ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।