ঢাকা ১৬ অক্টোবর, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
রকিবুল হাসান রনি ও তার পরিবারের ভয়ঙ্কর প্রতারণার জাল এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১৬ অক্টোবর একদিন বাকি, নিবন্ধন করেছেন মাত্র ১৫ শতাংশ হজযাত্রী আইনের শাসন কাকে বলে, নির্বাচনের মাধ্যমে দেখাতে চাই : সিইসি গাজা সিটিতে সবাইকে ‘সন্ত্রাসী’ বলল ইসরায়েল, নিহত আরও ৫৩ ইসলামী ব্যাংকের ফেসবুক পেজ হ্যাকড, ওয়েবসাইটে হামলার হুমকি মার্কিন সরকারে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে শাটডাউন গাজামুখী ফ্লোটিলা বহর আটক, কঠোর নিন্দা জানালো বাংলাদেশ আজ বিজয়া দশমী সুমুদ ফ্লোটিলা বহরের দুই জাহাজ ঘিরে ফেলেছে ইসরায়েল

বিশ্ব পানি দিবস আজ

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ মার্চ, ২০২২,  11:29 AM

news image

আজ  ২২ মার্চ, বিশ্ব পানি দিবস। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত এক প্রস্তাব অনুযায়ী প্রতি বছর ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও’তে এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। সেখানে পানিসম্পদের জন্য একটি বিশেষ দিন ঘোষণার দাবি তোলা হয়। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। 

এদিকে, পানি সমস্যার সমাধানে পানি আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের বিকল্প নেই বলে মত প্রকাশ করেছেন পানি বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও পানি নিয়ে কর্মরত সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে গতকাল এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে পানি বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির বর্ধিত আহরণের কারণে, সময়ের সাথে সাথে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশ নিচের দিকে নেমে এসেছে এবং শহরাঞ্চল ও বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির স্তরের স্থায়ী হ্রাসও উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় মাটি থেকে পানি উত্তোলন ব্যয়বহুল ও দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে। আবার ২৪ শতাংশ এলাকা উচ্চতর আর্সেনিক, লবণাক্ততা এবং ভূগর্ভস্থ পানি হ্রাসের কারণে বাংলাদেশ অত্যন্ত উচ্চ থেকে উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

বিশ্ব ব্যাংকের তথ্যমতে, কৃষিজ সেচ ৯০ শতাংশ গার্হস্থ্য এবং শিল্প ১০ শতাংশ কারখানায় ব্যবহারের জন্য বছরে আনুমানিক ৩২ ঘন কিমি ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হয়। কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের হিসাব অনুযায়ী সারা দেশে অগভীর সেচ ক‚পের সংখ্যা ১৯৮৫ সালে ১,৩৩,৮০০ থেকে ২০০৬ সালে ১,১৮২,৫২৫ এবং ২০১৯ সালে প্রায় ১,৬০০,০০০-এ উন্নীত হয়েছে। এদিকে পানি দিবসের কর্মসূচি হিসেবে আজ সারা দেশে র‌্যালিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। তবে মূল কর্মসূচি পালন করা হবে আগামী ৪ এপ্রিল বলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁর বাণীতে বলেছেন, নদীমাতৃক কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও সামগ্রিক উন্নয়নে সঠিক ও পরিকল্পিত পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার ভূমিকা অপরিসীম। প্রেসিডেন্ট বলেন, দেশে ফসল উৎপাদন, সেচ ও গৃহস্থালি কাজে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাটির নিচে পানির আধার সুরক্ষা ও পানির গুণাগুণ বজায় রাখতে ভূউপরস্থ ও ভূগর্ভস্থ পানির সমন্বিত ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ ঘোষিত এ বছরের বিশ্ব পানি দিবসের প্রতিপাদ্য ‘ভূগর্ভস্থ : অদৃশ্য সম্পদ দৃশ্যমান প্রভাব’ সামগ্রিক বিবেচনায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, দেশে ভূগর্ভস্থ পানির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদীভাঙন রোধ, ভূমি পুনরুদ্ধার, জলাবদ্ধতা দূরীকরণে আওয়ামী লীগ সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে, যা দেশের আপামর জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত সহিষ্ণু ব-দ্বীপ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ প্রণয়ন করেছে। এই পরিকল্পনার স্বাদু পানির উপকৌশল ১.৪ এর আওতায় ভূগর্ভস্থ পানি সুরক্ষা অঞ্চল নির্ধারণ ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা রয়েছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদা লাভ করবে। তিনি বলেন, প্রতি বছর এই দিবসে মিঠা পানির গুরুত্বের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য এসডিজি-৬ অর্জনকে গতিশীল করার প্রয়াস নেয়া হয়। ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য পানি এবং স্যানিটেশন প্রাপ্যতা নিশ্চিত করাই এসডিজি-৬ এর লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাবিশ্বের ২ বিলিয়ন মানুষ এখনও নিরাপদ পানীয় জলের অভাবে রয়েছে, ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন মানুষ নিরাপদ স্যানিটেশনের অভাবে আছে এবং ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন মানুষ মৌলিক স্বাস্থ্যবিধি হতে বঞ্চিত রয়েছে।

গতকালের সেমিনারে ড. আনোয়ার জাহিদ পরিচালক, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড তার মূল প্রবন্ধে ভূগর্ভস্থ পানির বৈশ্বিক ও জাতীয় পরিস্থিতি এবং একটি অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ হিসেবে এর ব্যবহার তুলে ধরে তিনি বলেন, পানির প্রাথমিক ও মূল্যবান উৎস হলো ভূগর্ভস্থ পানি। কিন্তু পানির অযৌক্তিক আহরণ এবং মানবসৃষ্ট দূষণ যেমন বন উজাড়, শিল্প, কৃষি ও পশুপালন, পয়ঃনিষ্কাশন, ঝড়ে সৃষ্ট পানির প্রবাহ, তেল দূষণ, তেজস্ক্রিয় পদার্থ, রোগজীবাণু, লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ ইত্যাদির কারণে পানির স্তর ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।

সেমিনারে বক্তারা এই দুষ্প্রাপ্য সম্পদের যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানির অন্বেষণ, সুরক্ষা এবং টেকসই ব্যবহারের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। এতে প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত¡ বিভাগের প্রফেসর, ড. কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. দিলীপ কুমার দত্ত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত¡ বিভাগের প্রফেসর ড. চৌধুরী সরোয়ার জাহান, বুয়েট সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর এবং আইটিএন-বুয়েটের পরিচালক ড. তানভীর আহমেদ, ওয়াটার এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান এবং ইউএন মাইগ্রেশন এজেন্সি, আইওএম, বাংলাদেশ মিশনের ওয়াশ অফিসার সালাউদ্দিন আহম্মেদ।

logo
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: মনিরুজ্জামান মনির