রাজস্ব ফাঁকি ৩ বছরেও লিজ হয়নি কুড়িগ্রাম ট্রেনের খাবার গাড়ি
নিজস্ব প্রতিবেদক
২১ ডিসেম্বর, ২০২২, 4:35 PM
নিজস্ব প্রতিবেদক
২১ ডিসেম্বর, ২০২২, 4:35 PM
রাজস্ব ফাঁকি ৩ বছরেও লিজ হয়নি কুড়িগ্রাম ট্রেনের খাবার গাড়ি
আশরাফুল হক, লালমনিরহাট।
লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের অধিনে চালু হওয়া কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনটি দীর্ঘ ৩বছরেও খাবার গাড়ি লিজ হয়নি।
ফলে তৎকালিন রেলওয়ের ঊচ্চপদস্থ তিনজন কর্মকর্তা বর্তমানে অবসরে গেলেও তারাই পরিচালনা করছেন এ গাড়ির খাবারের হোটেল। যাত্রীদের কাছ থেকে গলাকাটি দাম নেয়া হলেও সরকার হারাচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব আয়।
যাত্রী সাধারনের অভিযোগে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে ২হাজার ৮শত কিলোমিটার রেললাইন পরিচালনা করে পুর্ব ও পশ্চিম নামে দু'টি অঞ্চল।পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অধীনে রেলপথ রয়েছে ১হাজার ৪শত ২৭কিঃমিঃ। এ অঞ্চলের অধীনে দুইটি বিভাগ রয়েছে, লালমনিরহাট ও পাকশী রেল বিভাগ।
বর্তমান বাংলাদেশ রেলওয়ের ৪টি বিভাগের মধ্যে লালমনিরহাট অন্যতম। লালমনিরহাট রেল বিভাগের আওতাধীনে প্রতিদিন চলাচল করছে কয়েকটি আন্তঃনগর লালমনি এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস ও পঞ্চগড় এক্সপ্রেস। এসব আন্তঃনগর ট্রেনে যাত্রীদের জন্য রয়েছে খাবার হোটেলের ব্যবস্হা। এসব খাবার গাড়ি বার্ষিক লিজ দিয়েও রাজস্ব আদায় করছে সরকার।
প্রতি বছর রেলওয়ে কতৃপক্ষ সব বিভাগের আন্তঃনগর ট্রেনের খাবার গাড়ি দরপত্রের মাধ্যমে সর্বচ্চ দর-দাতার নামে বার্ষিক লিজে বরাদ্দ দেন। কিন্তু ১৮২টি আসনের কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনটির জন্মলগ্ন থেকে খাবার গাড়ির কোন দরপত্রই আহবান করা হয়নি। রেল বিভাগের নাম করে খাবার গাড়ি রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত তিনজন শীর্ষ কর্মকর্তার দখলে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদের মধ্যে ডিডি-৩ কালীকান্ত দাস চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারী এবং সাইদুর রহমান চলতি বছরের অক্টোবরে অবসর গ্রহন করেন। তারা অবসরে গিয়েও রেলে ব্যবসা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ গাড়ির খাবারের মান নিয়েও যাত্রীদের বিস্তার অভিযোগ রয়েছে। ৫০-৬০ গ্রামের একপিস কর্ক মুরগির মাংস, একটা সিদ্ধ ডিম, হাফ প্লেট পোলাও, একটি পানির বোতল ও একটি কাঁচা মরিচ দিয়ে নেয়া হচ্ছে ১৭০ টাকা। যা বাজারে ৯০-১০০ টাকায় মিলে। নাস্তাতেও একই ভাবে গলাকাটা দাম নেয়ার অভিযোগ যাত্রীদের।
ইকবাল হোসেন নামে একজন যাত্রী বলেন, সর্বনিম্ন মানের খাবার দিয়েও গলাকাটা দাম নেয়া হচ্ছে এ ট্রেনে। দুই দিন যাত্রা করতে এ ট্রেনের খাবারে পেটের সমস্যায় ভুগতে হয়েছে। কিন্তু নিরুপায় হয়ে খেতে হয় যাত্রীদের।
কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের রংপুর আলমগরের একটি পরিত্যাক্ত বাসায় খাবারের রান্না ঘরে গিয়ে দেখা যায়, পামওয়েল দিয়ে রান্না হচ্ছে যাত্রীদের খাবার। কুডিগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনটি বড় হওয়ায় খাবার গাড়ি রয়েছে দুইটি। রান্না হয় রংপুর ও ঢাকায়। সকাল ৭টায় কুড়িগ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং পুনরায় ফিরে আসে।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক রেলওয়ের একজন কর্মচারী দাবি করেন, ট্রেনটি চালুর দিন রেল ভবনের তিনজন ডিপুটি ডাইরেক্টর(ডিডি)-৩ কালীকান্ত দাস, সাইদুর রহমান ও এডিজি (অপারেশন) মিয়াজান পরীক্ষামুলক ও রেলের নাম করে নিজেরাই লিজ নিয়েছেন। যার কারনে এ খাবার গাড়ির কোন তথ্যই নেই রেল বিভাগে। এ কারনে এ গাড়ির খাবারের মান বা আয় ব্যায় নিয়েও খবর রাখেন না কেউ।
তবে এ ট্রেনের খাবার গাড়ির দায়িত্বে থাকা সৌরভ ঘোষ বলেন, রেলওয়ের দেয়া মুল্য তালিকা অনুযায়ী খাবার বিক্রি করা হচ্ছে। এ ট্রেনের খাবার গাড়ি রেলওয়ে পরিচালনা করছে। আমরা খাবার পরিবেশনকারীরা রেলওয়ের কর্মী নই। তবে আলাদা ভাবে আমাদেরকে মজুরী দেয়া হয়।
রেলওয়ে লালমনিরহাট বিভাগের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ১ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খাবার গাড়ি প্রতিবছর দরপত্রের মাধ্যমে সর্বচ্চ দরদাতাকে নির্ধারীত মুল্যে মানসম্পন্ন খাবার বিক্রির শর্তে লিজ দেয়া হয়। এ বিভাগের লালমনি এক্সপ্রেস ৯২হাজার ৪০০ টাকায়, রংপুর এক্সপ্রেস ৯২হাজার ৪০০টাকায়, একতা এক্সপ্রেস ৭৯হাজার ২০০ টাকায়, দ্রুতযান এক্সপ্রেস ৭৯হাজার ২০০টাকায় ও পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ৭৯হাজার ২০০ টাকায় বার্ষিক লিজ দেয়া হয়েছে। তবে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনের খাবার গাড়ির কোন তথ্য বা চিঠি আমাদের কাছে নেই। রেল ভবনই ভাল জানেন এ গাড়ির তথ্য।
রেলভনের অবসর প্রাপ্ত ডিডি-৩ কালীকান্ত দাস বলেন, কারও নামে লিজ নেই কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস। কুড়িগ্রাম, সুন্দরবন এক্সপ্রেসসহ ৪টি ট্রেন রেলওয়ের মার্কেটিং বিভাগ নিয়ন্ত্রন করছে। আমি মাঝে মধ্যে সময় দিয়ে সহায়তা করি। যাত্রীসেবাই মুল, খাবার বিক্রি করে আয় করা রেলের কাজ নয়। তবুও আউট সোর্সিংয়ের জনবল দিয়ে খাবার গাড়ি পরিচালিত হচ্ছে। ঊর্দ্ধগতির বাজারে খাবার বিক্রি করে শ্রমিকের বিল পরিশোধ করে কত টাকা আয় হয়? উত্তরাঞ্চলের গাড়িতে বিক্রিও অনেক কম বলেও দাবি করেন তিনি।
লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগিয় ম্যানেজার আব্দুস সালাম বলেন, সকল আন্তঃনগর ট্রেনের খাবার গাড়ি বার্ষিক লিজ দেয়া আছে এবং সেখান থেকেও রেলের আয় হচ্ছে। সদ্য যোগদান করায় কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের খাবার গাড়ির বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রেলওয়ে পশ্চিম অঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, দরপত্র না হলেও কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনের খাবার গাড়ি পরীক্ষামুলক ভাবে রেলওয়ে পরিচালনা করছে। যা অন্যান্য ট্রেনের তুলনায় আয় বাড়ছে। তবে কি পরিমান আয় হচ্ছে তার কোন তথ্যই তিনি দিতে পারেননি। নিম্নমানের খাবারের বিষয়ে অভিযান চালানো হবে বলেও আশ্বাস্থ করেছেন।