রেলপথে রংপুরের মানুষের দুর্ভোগ, দুটি ট্রেন তবুও টিকিট পেতে যুদ্ধ
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৪ অক্টোবর, ২০২৫, 1:55 PM
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৪ অক্টোবর, ২০২৫, 1:55 PM
রেলপথে রংপুরের মানুষের দুর্ভোগ, দুটি ট্রেন তবুও টিকিট পেতে যুদ্ধ
দেড়শ বছরের পুরোনো রংপুর বিভাগীয় রেল স্টেশনটিতে লাগেনি কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া। রেলযাত্রায় বাড়েনি ট্রেনের সংখ্যা, এ কারণে কমেনি দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ। আর এ জেলার মানুষের কাছে ট্রেনের টিকিট যেন সোনার হরিণ। ঢাকাগামী দুইটি মাত্র ট্রেনে যাত্রী চাহিদার ২০ ভাগ টিকিটও দিতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ। অনলাইন ও কাউন্টার দুই মাধ্যমেই টিকিট পেতে হয় যুদ্ধ করে।
জানা যায়, রংপুর থেকে ঢাকাগামী একমাত্র ট্রেন রংপুর এক্সপ্রেস। এছাড়া কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস যাত্রাবিরতি দেয় রংপুরে। প্রতিদিন রংপুর এক্সপ্রেস ও কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস গড়ে সাড়ে ৬শ যাত্রী বহন করে। কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসে রংপুরের জন্য আসন সংখ্যা বরাদ্দ মাত্র ১৫৪টি। আর রংপুর এক্সপ্রেসে বরাদ্দ ১৯৯টি। কিন্তু এ ট্রেন দুইটিতে দৈনিক চাহিদা অনুযায়ী টিকিট পাওয়া যেন ভাগ্যের ব্যাপার।
যাত্রীরা বলছেন, চাহিদার ২০ ভাগ টিকিট দিতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ। এতে বেড়েছে ভোগান্তি। এ সমস্যা সমাধানে ট্রেন ও বগির সংখ্যা বাড়ানোর দাবি যাত্রীদের। রংপুর থেকে রেলপথে ঢাকায় যাবেন নূর মোহাম্মদ। টিকিট কাটতে তিনি এসেছেন রংপুর রেলওয়ে স্টেশনে। ষাটোর্ধ্ব বয়সী এই রেলযাত্রী
বলেন, আমরা সবসময় কষ্টের মধ্যে যাতায়াত করি। কাউন্টারে আসলে বলে কোনো টিকিট নাই, অনলাইনে কাটেন। আমার মত সাধারণ মানুষ তো অনলাইনে টিকিট কাটতে পারবে না। আমি এসব বুঝিও কম। তাহলে আমি কোথায় যাবো, কার কাছে টিকিট চাইবো? আমাদের এই কষ্ট দেখার কেউ নাই।
স্থানীয় বাসিন্দা কামরুল হাসান বলেন, বিভাগীয় স্টেশন আছে। কিন্তু এখানে কোনো বিভাগীয় কার্যক্রম নেই। আরও একটি ট্রেন বাড়িয়ে কাউন্টারে টিকিট বিক্রি শুরু করলে নাগরিক সুবিধার ব্যবস্থা করা গেলে খুব ভাল হবে। নয়তো এই ভোগান্তি থেকেই যাবে।
মুনমুন রহমান নামে আরেক যাত্রী বলেন, এখানে পদে পদে যাত্রীদের ভোগান্তি। স্টেশনের অবস্থাও বেহাল। নেই যাত্রী ছাউনি, পারাপারে ফুটওভার ব্রিজ, দ্বিতীয় প্ল্যাটফর্মে যাতায়াতের ব্যবস্থাসহ স্টেশনটির বাউন্ডারি ওয়াল। কাউন্টারে টিকিট পেতেও কষ্ট করতে হয়। অনলাইনে তো সমস্যার শেষ নেই। আমরা বারবার শুনি, রংপুর রেল স্টেশনের উন্নয়ন হবে, ট্রেনের সংখ্যা বাড়বে কিন্তু অজানা কারণে আমরা উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছি।
ট্রেনের নিয়মিত যাত্রী মোখলেছুর রহমান বলেন, অনলাইনে টিকিট কাটতেও ভোগান্তি। আগেই বুকিং হয়ে যায় নয়তো সিন্ডিকেট চক্র এসব কেটে রাখে। কখনো কখনো নেটওয়ার্ক সমস্যায় পড়তে হয়। অনলাইনের মতো অফলাইনেও বিড়ম্বনার শেষ নেই। মাত্র দুটি ট্রেন, তারপরও আমরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছি না।
এ বিষয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, রংপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি থাকা সত্ত্বেও রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা অত্যন্ত হতাশাজনক।
রংপুর বিভাগ উন্নয়ন আন্দোলন পরিষদের আহ্বায়ক ওয়াদুদ আলী বলেন, ১৮৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত রংপুর রেলওয়ে স্টেশনে একবার মাত্র দায়সারাভাবে উন্নয়ন কাজ হয়েছিল ১৯৪৪ সালে। এরপর শত বছর পেরিয়ে গেলেও বিভাগীয় শহর হিসেবে রংপুরের এই স্টেশনটির দৃশ্যমান আর কোনো উন্নয়ন হয়নি।
রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব পলাশ কান্তি নাগ বলেন, রেল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে যে রেল মন্ত্রণালয় রয়েছে বরাবরই উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। আমরা মনে করি যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিকায়নের জন্য রেলকে ঢেলে সাজানো উচিত।
তিনি আরও বলেন, উত্তরের কোটি মানুষের ট্রেন যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন রংপুর। অন্য লাইনে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন স্থাপন হলেও রংপুর সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আমরা আর বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকতে চাই না। দ্রুত রংপুর রেলওয়ে স্টেশনের সংস্কার করে আধুনিকায়ন করাসহ এই স্টেশনের ওপর দিয়ে নূন্যতম আরও দুটি আন্তঃনগর ট্রেন বরাদ্দ এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
দেশ যখন মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করেছে, তখন উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বড় শহর রংপুরে রেলযাত্রা রয়ে গেছে সীমাহীন দুর্ভোগের আরেক নাম। আর ট্রেন সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বরাবরের মতোই উদাসীন রেল কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে দায়সারা বক্তব্য কর্তৃপক্ষের।
রংপুর রেলওয়ে স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, রেলের টিকিটের ক্ষেত্রে অনলাইনে কেটে নিতে হবে, ঢাকাগামী ট্রেনের টিকিট ১০ দিন আগেই থেকে বিক্রি শুরু হয়। যেহেতু শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে সেখানে রংপুরবাসীর জন্য করার কিছু নাই। আমরা সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা হয়ত ব্যবস্থা নেবে। এখানে আমাদের করার কিছু নাই।