ঢাকা ৩০ অক্টোবর, ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম
হজের খরচ কমছে লাখ টাকা, প্যাকেজ ঘোষণা আজ নতুন ভোটার তালিকা তৈরিতে সময় লাগবে ১০ মাস আজ ঢাকা আসছেন অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্গ বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তর সম্পূর্ণ সমর্থন দেবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাশকতার ১০ মামলা হাইকোর্টে বাতিল স্কুলে ভর্তির আবেদন ১২-৩০ নভেম্বর, ডিজিটাল লটারি ডিসেম্বরে বায়ুদূষণে তৃতীয় ঢাকা উ. কোরিয়ার সৈন্য রাশিয়ায়, নিশ্চিত করল পেন্টাগন-ন্যাটো শেখ হাসিনার দোসরদের ব্যাংক লুট নিয়ে যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে মানুষ এখনো অবৈধভাবে ভারতে আসছে: আসামের মুখ্যমন্ত্রী

লালমনিরহাট বিভাগে ইঞ্জিন ও চালক সংকটে অর্ধেক ট্রেনই বন্ধ

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৭ আগস্ট, ২০২৩,  6:07 PM

news image

রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল লালমনিরহাট বিভাগে ছয়টি সেকশনে মেয়াদ উত্তীর্ণ ইঞ্জিন দিয়েই ৪২টি ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ইঞ্জিন ও ট্রেন চালকের সঙ্কটের কারণে ২০টি ট্রেন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। লালমনিরহাট বিভাগে একটি মাত্র  ইঞ্জিন ছাড়া অবশিষ্ট ৩১টিই ইকোনোমিক আয়ুষ্কাল পেরিয়ে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে ১৮টি দিয়ে ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে এবং ছয়টি ইঞ্জিন পরিত্যক্ত অবস্থায় কেন্দ্রীয় মেরামত কারখানায় (কেলোকা) পড়ে রয়েছে। এছাড়া যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চালনায় অনুপযোগী বাকি আটটি দিয়ে শান্টিং কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে।
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপকের কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় কার্যালয় ছয়টি সেকশন নিয়ে পরিচালিত। এসব সেকশন হলো- লালমনিরহাট-বুড়িমারী, লালমনিরহাট-তিস্তা-রমনাবাজার, লালমনিরহাট-পার্বতীপুর, লালমনিরহাট-সান্তাহার, পার্বতীপুর-বিরল বর্ডার ও কাঞ্চন-পঞ্চগড়। ট্রেনের সময়-সূচি অনুযায়ী এসব সেকশনে প্রতিদিন ‘মেইল এক্সপ্রেস’ ২৪টি, ‘লোকাল-মিক্সড’ ২৬টি ও ‘আন্তঃনগর এক্সপ্রেস’ ১২টি ট্রেন চলাচল করার কথা। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় ট্রেন চালক এবং ইঞ্জিন না থাকায় চারটি মেইল এক্সপ্রেস, ১৬টি ‘লোকাল-মিক্সড’ ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ২০টি মেইল এক্সপ্রেস, ১০টি লোকাল-মিক্সড ও ১২টি আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন কখনও নিয়মিত আবার কখনও অনিয়মিতভাবে চলাচল করছে। এসব ট্রেন পরিচালনার জন্য রেলওয়ের নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী প্রতিদিন ৬২টি ইঞ্জিন প্রয়োজন। অথচ লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের কাছে আছে মাত্র ৩২টি ইঞ্জিন। এরমধ্যে ছয়টি মেরামত অযোগ্য হওয়ায় কেলোকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ট্রেন চালনায় অনুপযোগী আটটি ইঞ্জিন শান্টিং কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। অবশিষ্ট ১৮টি ইঞ্জিনকে কোনও রকম জোড়াতালি দিয়ে ৪২টি ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে।

এছাড়া এসব ট্রেন পরিচালনার জন্য মঞ্জুরিকৃত লোকো মাস্টার (এলএম) ১ম গ্রেড ও লোকো মাস্টার ২য় গ্রেডে পদ সংখ্যা ৮০টি। কিন্তু  কর্মরত রয়েছে নিয়মিত ২৯ জন ও চুক্তিভিত্তিক ৭ জন। ৫১টি পদ শূন্য রয়েছে। সহকারী লোকো মাস্টার (এসএলএম) মঞ্জুরিকৃত ৪২টি পদের স্থলে কর্মরত রয়েছেন ১৭ জন। ২৫টি পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া সহকারী লোকো মাস্টার ১ম গ্রেডে মঞ্জুরিকৃত ৪৬টি পদের স্থলে কর্মরত আছেন ৩৯ জন ও সহকারী লোকো মাস্টার ২য় গ্রেডে মঞ্জুরিকৃত ৮৬টি পদের স্থলে কর্মরত আছেন ৪৬ জন। এ পদের ১ম গ্রেডে সাতটি ও ২য় গ্রেডে ৪০টি পদ শূন্য রয়েছে। বর্তমানে সর্বমোট মঞ্জুরিকৃত ২৫৪টি পদের স্থলে ১৩১ জন কর্মরত থাকলেও ১২৩টি পদই শূন্য রয়েছে। ফলে সুষ্ঠুভাবে ট্রেন পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।


লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে সূত্রে জানা যায় বর্তমানে ১২টি আন্তঃনগর, ২০টি মেইল এক্সপ্রেস ও ১০টি লোকাল-মিক্সড ট্রেন চলাচল করছে। এসব ট্রেন পরিচালনার জন্য ৫০ নম্বর টাইম টেবিল (ট্রেন পরিচালনার জন্য বিশেষ সময় সূচীর ছক) অনুযায়ী প্রতিদিন ৪২টি ইঞ্জিন প্রয়োজন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় সরবরাহ রয়েছে মাত্র ৩২টি। এরমধ্যে সচল রয়েছে ১৮টি ।
 ১৯৬১ সালে আমেরিকা থেকে ২২শ সিরিজের (এমইজি-৯) ১১টি, ১৯৬৯ সালে কানাডা থেকে ২৩শ সিরিজের (এমইএম-১৪) ৮টি, ফের কানাডা থেকে ১৯৭৮ সালে ২৪শ সিরিজের (এমইএম-১৪) আরও ৯টি এবং ১৯৮১ সালে হাঙ্গেরি থেকে ৩৩শ সিরিজের (এমএইচজেড-৮) তিনটি ইঞ্জিন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগের জন্য আনা হয়েছিল। এরপর আর কোনও ইঞ্জিন কেনা হয়নি। তবে ২০১৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য আনা ২৯শ সিরিজের (এমইআই-১৫) একটি ইঞ্জিন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগকে দেওয়া হয়। এসব ইঞ্জিনের ইকোনোমিক আয়ুষ্কাল ২০ বছর নির্ধারিত। কিন্তু আমেরিকা থেকে আনা ১১টির আয়ুষ্কাল উত্তীর্ণ হয়ে গেছে ৩৪ বছর আগেই। কানাডা থেকে প্রথম ধাপে আনা ৮টির আয়ুষ্কাল উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে ৪৬ বছর হয়েছে। অর্থাৎ এগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে ২৬ বছর আগেই। দ্বিতীয় ধাপে কানাডা থেকে আনা ৯টির আয়ুষ্কাল উত্তীর্ণ হয়ে ৩৭ বছর হয়েছে। এগুলোরও মেয়াদ পেরিয়েছে ১৭ বছর আগে। হাঙ্গেরি থেকে আনা তিনটির আয়ুষ্কাল উত্তীর্ণ হয়ে ৩৪ বছর হয়েছে। এ তিনটি ইঞ্জিনের মেয়াদ ফুরিয়েছে ১৪ বছর আগে।

 চালক স্বল্পতার কারণে ট্রেন পরিচালনার জন্য অপরিহার্য লিংক যথাযথভাবে বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি দুর্ঘটনা সংঘটিত হলে কিংবা রিলিফ ট্রেন পাঠানোর প্রয়োজন হলে অন্য কোনও একটি ট্রেন বাতিল করতে হচ্ছে কিংবা অস্বাভাবিক বিলম্ব করতে হচ্ছে। তাছাড়া কোনও চালক অসুস্থ্ হয়ে পড়লে কিংবা বিশেষ প্রয়োজনে ছুটিতে গেলেও ট্রেন বাতিল করার উপক্রম হচ্ছে। দ্রুত চালক নিয়োগ এবং ইঞ্জিন সংযোজন করা না গেলে চলতি বছর টাইম টেবিল ৫০ নম্বর অনুযায়ী ট্রেন পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।  
বিষয়গুলো নিয়ে কতৃপক্ষকে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
শুধু তাই নয় ওয়ার্কি টাইম টেবিল ৫০ নম্বর অনুসারে লালমনিরহাট বিভাগের ৬২টি ট্রেন পরিচালনার জন্য নূন্যতম ৮০ সেট  চালক (এলএম/এএলএম) প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে সাতজন চুক্তিভিত্তিকসহ মাত্র ৩৬ জন চালক কর্মরত আছে।কেবল চালক সঙ্কটের কারণেই ৫০ নম্বর টাইম টেবিল অনুসারে গত কয়েক বছরে ১০ জোড়া (২০টি) ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

logo
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: মনিরুজ্জামান মনির