স্বরাষ্ট্র থেকে সরানোর প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন সাখাওয়াত
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৭ আগস্ট, ২০২৪, 12:26 PM
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৭ আগস্ট, ২০২৪, 12:26 PM
স্বরাষ্ট্র থেকে সরানোর প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন সাখাওয়াত
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদ থেকে সরিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে। একইসঙ্গে নতুন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শপথ নেওয়া নতুন উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) উপদেষ্টাদের দায়িত্ব পুনঃবন্টন করে এম সাখাওয়াত হোসেনকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন ভয়েস অব আমেরিকাকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এতে মন খারাপের কিছু নেই। আলহামদুলিল্লাহ, আমার যতটুকু করার সাধ্য ছিলো, করে আসছি।
গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং আরও ১৩ উপদেষ্টার সঙ্গে শপথ নেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হওয়ার পর গত ১২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এম সাখাওয়াত হোসেন। ওইদিন আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়া আওয়ামী লীগকে গন্ডগোল না করে নতুন মুখ নিয়ে দল গোছানো পরামর্শ দেন তিনি।
দেশের জন্য আওয়ামী লীগের অবদানের কথা তুলে ধরে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এটা অনেক বড় পার্টি। আই হ্যাভ লট অব রেসপেক্ট ফর আওয়ামী লীগ। একসময় বাঙালিদের ভরসার জায়গা ছিল এই পার্টি। বায়ান্ন, ঊনসত্তরের গণআন্দোলন ও স্বাধীনতা আন্দোলনের অবদান ব্যক্তিগত কোনো কারণে নষ্ট করবেন না। এটা জাতীয় সম্পদ। আওয়ামী লীগকে বলব এমন কিছু করবেন না যাতে জীবন বিপন্ন হয়। আপনারা রাজনৈতিক দল হিসেবে দল গুছিয়ে নিন। নির্বাচন হলে অংশ নিন। জনগণ ভোট দিলে ভোটে যাবেন। তবে প্রতিবিপ্লবের স্বপ্ন দেখলে হাজার-হাজার মানুষের রক্ত ঝরবে।
প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরার পরামর্শ দিয়ে সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেছিলেন, আপনি ভালো থাকেন, আবার আসেন। আমরা সবাই আপনাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু গন্ডগোল পাকানোর মানে হয় না, এতে লাভ হবে না। বরং লোকজন আরও ক্ষেপে উঠবে।
তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। এক বিক্ষোভ সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আজকের উপদেষ্টাের কেউ-কেউ খুনিদের পুনর্বাসন করার বক্তব্য দিচ্ছেন। আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, ছাত-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে আপনি উপদেষ্টা হয়েছেন। খুনি হাসিনাকে পুনর্বাসনের বক্তব্য যারা দিতে চায়, আমরা ছাত্র-জনতা যেভাবে তাদের উপদেষ্টা বানিয়েছি, ঠিক একইভাবে গদি থেকে নামাতে দ্বিধা করবো না।
ওই রাতেই এম সাখাওয়াত হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বিএনপির নেতাকর্মীরা।
পরে মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে তার মায়ের মতো পরিণতি ভোগ করার হুমকি দিচ্ছে সেই ‘একই জনতা’।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশের একটি বড় দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠন করতে বলেছেন। সেই ‘একই জনতা’ কোনোভাবেই তার সৎ পরামর্শ মেনে নিতে পারেনি, উল্টো তারা আমার মায়ের মতো একই পরিণতি ভোগ করার জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে হুমকি দিয়েছে।
এমন ঘটনায় বেশ চাপে পড়েন সাখাওয়াত হোসেন। ধারণা করা হচ্ছে, এসবের জেরে শুক্রবার তাকে স্বরাষ্ট্র থেকে সরিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তবে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা করা প্রসঙ্গে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এখন যেখানে দিয়েছে, সেখানে কাজ করতে পারলে করবো, আর অপারগ হলে চলে যাবো।
এর আগে শুক্রবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আরও চার উপদেষ্টা শপথ নেন। এ নিয়ে উপদেষ্টার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১ জনে। নতুন উপদেষ্টাদের দায়িত্ব দেওয়াসহ পুরোনোদের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করা হয়।
নতুন চার উপদেষ্টাকে একাধিক মন্ত্রণালয় ও কার্যালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয় এবং আলী ইমাম মজুমদারকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
অন্যদিকে আগের ৮ উপদেষ্টাদের মধ্য থেকে একইদিন সালেহ উদ্দিন আহমেদকে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আসিফ নজরুলকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়; আদিলুর রহমান খানকে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়; রিজওয়ানা হাসানকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়; নাহিদ ইসলামকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়; আসিফ মাহমুদকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান; ফারুক-ই-আজমকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়; ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। এরপর বিলুপ্ত করা হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ। গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।