হঠাৎ সারাদেশে বেড়ে গেছে ডাকাতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
২২ জুন, ২০২২, 10:08 AM

নিজস্ব প্রতিবেদক
২২ জুন, ২০২২, 10:08 AM

হঠাৎ সারাদেশে বেড়ে গেছে ডাকাতি
সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় হঠাৎ বেড়ে গেছে ডাকাতির ঘটনা। বিশেষ করে বন্যাকবলিত সিলেট ও সুনামগঞ্জে ডাকাতির ঘটনা বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের রাস্তায় এবং বাসাবাড়িতে ঘটছে এসব ডাকাতির ঘটনা। এজন্য সবাইকে সর্তক থাকতে বলছে পুলিশ।
সাম্প্রতিক সময়ে বেড়ে যাওয়া চুরি-ডাকাতি রোধে মাঠপর্যায়ে পুলিশকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকাসহ সারাদেশে বাড়ানো হয়েছে টহল-তল্লাশি। পুলিশ সদর দপ্তর ও মেট্রোপলিটন পুলিশের একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যাকবলিত সিলেট ও সুনামগঞ্জের মানুষেরা রয়েছে চরম দুর্ভোগে। এই দুই জেলার বিভিন্ন এলাকা এবং সিলেট ও সুনামগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় নৌকায় করে ডাকাতরা হানা দিচ্ছে- এমন খবর ছড়িয়ে পড়েছে। এসএমএসের মাধ্যমেও এমন খবর জানিয়েছেন ওই এলাকার একাধিক মানুষ।
এসব এলাকার বাসিন্দারা বলেছেন, দু-একটি স্থানে চুরি ও ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে ছোটখাটো ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে।
এদিকে সিলেটের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় ও নিরাপত্তার অনেকটা ঘাটতি থাকার কারণে এসব ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, সিলেট শহরের বাগবাড়ী, বর্ণমালা পয়েন্ট, আখালিয়া, কানিশাইল, শামীমাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় ডাকাত দলের সদস্যরা হানা দেয়। এছাড়া সুনামগঞ্জ শহরের বাঁধনপাড়া, মরাটিলা, ময়নার পয়েন্ট, নতুনপাড়া, হাজীপাড়া ও হাসননগরের বিভিন্ন বাসায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
রাজধানী ও আশপাশের এলাকায়ও বেড়েছে ডাকাতির ঘটনা। সম্প্রতি ডেমরা এলাকায় পুলিশের এক এসআই ও কনস্টেবলের পরিবারকে বাসায় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্বর্ণালঙ্কার, টাকা-পয়সা নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনা পুলিশ প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে। গত কয়েক মাসে ঢাকাসহ সারাদেশে বেশকিছু ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে দু-একটি গণমাধ্যমে এসেছে । বাকি সব ঢাকা পড়েছে। এসব ডাকাতের কবলে পড়ে গুরুতর আহত হওয়ার পাশপাশি ঘটছে প্রাণহানিও। গত ফেব্রুয়ারি মাসেও রাজাধানীতে প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন। তাছাড়া ডাকাতের কবলে পড়ে গত ২ মাসে আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। তারা সবাই ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অভিনব কায়দায় ডাকাতির ঘটনাও ঘটছে। এ নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ নাগরিকদের সতর্ক করে বলছে, চলন্ত অবস্থায় কেউ ঢিল ছুড়ে চলার পথে আপনার গাড়ির কাচ ভেঙে দিলে বা অন্য কোনো ক্ষতি করলে আপনি স্বাভাবিকভাবেই থেমে এ অন্যায়ের প্রতিকার করতে চাইবেন। কিন্তু প্রতিকারের সময়, আপনি বরং বিপদেই পড়ে যাবেন। ঢিল ছোড়া পার্টি অস্ত্র দেখিয়ে আপনার সর্বস্ব লুটে নিয়ে চলে যাবে। আপনি বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে মার খাবেন, এমনকি ছুরিকাঘাতও হতে পারেন, হাত-পা বেঁধে আপনাকে মহাসড়কের পাশে ফেলে রেখে ডাকাতরা ডাকাতি করতে পারে। তাই এসব বিষয়ে অধিক সর্তক থাকতে পরামর্শ দিচ্ছেন গোয়েন্দারা। প্রয়োজনে পুলিশকে তথ্য জানাতেও বলছেন।
এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি প্রধান) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে, সেজন্য সর্তক রয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
কে এম হাফিজ আক্তার আরো বলেন, মঙ্গলবার ডাকাত চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সেসব নিয়ে আমরা কাজ করছি। ঢাকাসহ সারাদেশে ডাকাত চক্রের সদস্যদের ধরতে গোয়েন্দা পুলিশ তৎপর রয়েছে এবং এসব অপরাধ দমনে অভিযানও চলছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন ও বন্যাকবলিত এলাকায় পানিতে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ কাজ করছে। তারপরও ডাকাতি-চুরি-ছিনতাই ঠেকাতে পুলিশকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, সম্প্রতি আমরা কয়েকটি ডাকাত চক্রকে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি। তারা মূলত অটোরিকসা, ভ্যান, ট্যাক্সি, বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে ডাকাতি করত। দীর্ঘদিন তারা ডাকাতি করত। এ চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে আমরা আইনের আওতায় এনেছি।
র্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র্যাব প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা ও শহর থেকে অসংখ্য ডাকাত চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করছে। ভিকটিমদের অভিযোগের ভিত্তিতে ডাকাতি-চুরি-ছিনতাইসহ এ ধরনের অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে র্যাব চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, রাজধানীসহ বন্যাকবলিত এলাকায় ডাকাতি বেড়ে গেছে। এর কারণে মানুষ অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। এসব ডাকাতির ঘটনায় প্রাণহানিও ঘটছে এবং মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। এজন্য সাধারণ মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অতিরিক্ত সর্তক থাকতে হবে। তাহলেই এসব অপরাধ কমে আসবে।