২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পাস
নিজস্ব প্রতিবেদক
০১ জুলাই, ২০২২, 11:03 AM
নিজস্ব প্রতিবেদক
০১ জুলাই, ২০২২, 11:03 AM
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পাস
বড় কোনো পরিবর্তন পরিমার্জন এবং সংশোধন ছাড়াই ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এটি পাসের প্রস্তাব করলে কণ্ঠভোটে পাস হয়। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদের সভাপতিত্বে করেন।
গত ৯ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। এবারকার বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আগামীকাল শুক্রবার (১ জুলাই) থেকে শুরু হচ্ছে নতুন অর্থবছর। এদিন থেকেই নতুন বাজেট কার্যকর হবে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। নতুন অর্থবছরের বাজেট মোট জিডিপির প্রায় ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
এর আগে গতকাল বুধবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে সরকারের অর্থ বিল পাস করা হয়। সেখানে পাচারের অর্থ-সম্পদ দেশে ফেরত আনতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে যেসব সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল, তাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। সে অনুযায়ী পাচারের সব ধরনের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দেশে আনার প্রস্তাব বাতিল করা হয়। শুধু নির্ধারিত হারে কর দিয়ে পাচার করা নগদ টাকা দেশে আনা যাবে।
এ বিষয়ের সংশোধনীতে নতুন করে একটি শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। তা হলো, দেশের বাইরে কারো সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেলে ওই সম্পদ অর্জনের উৎস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে। সন্তোষজনক জবাব পাওয়া না গেলে ওই সম্পদের মূল্যের সমপরিমাণ জরিমানা অথবা বাজেয়াপ্ত করা হবে। নতুন বাজেটে এটিসহ আরো কিছু কর প্রস্তাবে পরিবর্তন এনে গতকাল অর্থ বিল-২০২২ পাস হয়।
পাস হওয়া বাজেটে সরকার আগামী অর্থবছরে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, কর্মসংস্থান বাড়ানো, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতি বিশেষ নজর দিয়েছে। এজন্য বাজেটে দিকনির্দেশনা রয়েছে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে চলতি অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় আগামী বাজেটেও করপোরেট করে গুরুত্ব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
নতুন বাজেটে আগামী অর্থবছরের জন্য মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। নতুন বাজেটে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। এনবিআর ৩ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা পেয়েছে। এটি জিডিপির ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা নতুন বছর ৪০ হাজার কোটি টাকা বাড়ছে। শতকরা হিসাবে তা ১২ শতাংশ।
আগামী বাজেটে এনবিআরবহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। করবহির্ভূত রাজস্ব (এনটিআর) আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ দুই খাতে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা যথাক্রমে ১৬ হাজার কোটি ও ৪৩ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে নতুন বাজেটে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে যথাক্রমে ১৩ ও ৫ শতাংশ।
সরকারের মোট বাজেটের মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এ বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ দশমিক ৬ শতাংশের সমান।
এনবিআরবহির্ভূত কর থেকে আসবে ১৮ হাজার কোটি টাকা, আর কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতির মধ্যে অনুদানসহ বৈদেশিক উৎস থেকে আসবে ৯৮ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা আর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসবে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে ব্যাংক খাত থেকে নেয়া হবে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা।
গত ১৩ জুন সম্পূরক বাজেট পাসের পর ১৪ জুন থেকে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্যদিয়ে গত ২৯ জুন এই আলোচনা শেষ হয়। প্রায় ৩৯ ঘণ্টার এ আলোচনায় সরকার ও বিরোধী দলের মোট ২২৮ জন সংসদ সদস্য অংশগ্রহণ করেন।
বৃহস্পতিবার রাতে বাজেট পাস হওয়ার মধ্যদিয়ে এই অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন স্পিকার।