ওয়াশিং প্ল্যান্ট প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ তথ্যনির্ভর নয়: রেলওয়ে কর্মকর্তাদের দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক
০১ নভেম্বর, ২০২৫, 5:32 PM
নিজস্ব প্রতিবেদক
০১ নভেম্বর, ২০২৫, 5:32 PM
ওয়াশিং প্ল্যান্ট প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ তথ্যনির্ভর নয়: রেলওয়ে কর্মকর্তাদের দাবি
বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়াশিং প্ল্যান্ট প্রকল্প নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, অভিযোগগুলো সঠিক ও তথ্যনির্ভর নয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা, যার মাধ্যমে রেলওয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা চলছে। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, আমেরিকা থেকে সংগৃহীত স্বয়ংক্রিয় ওয়াশিং প্ল্যান্ট দুটি ২০২১ সালে স্থাপন শেষে রেলওয়ের অপারেশন বিভাগে হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তী দুই বছর প্লান্টের ওয়ারেন্টি সময় সফলভাবে অতিক্রান্ত হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২২–২৩ সাল পর্যন্ত। পুরো মেয়াদে প্লান্ট সংক্রান্ত কোনো ত্রুটি বা অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি প্লান্ট বিকল হওয়ার অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, অভিযোগটি ভিত্তিহীন। প্লান্ট দুটি এখনও সচল এবং সম্পূর্ণ ব্যবহারযোগ্য। ক্লিনিং রিয়াজেন্টের ঘাটতি ও রেক স্থাপনের কিছু কারিগরি জটিলতার কারণে বর্তমানে প্লান্টগুলো চালানো হচ্ছে না। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গত মে/জুন মাসে ঢাকা ও রাজশাহীতে গিয়ে পরিদর্শন শেষে প্লান্ট দুটি সচল ও কার্যকর অবস্থায় পেয়েছে। ক্রয় সংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করেও কমিটি কোনো অনিয়ম খুঁজে পায়নি। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, কমলাপুর ও রাজশাহী স্টেশনে স্থাপিত এই স্বয়ংক্রিয় ওয়াশিং প্ল্যান্ট দুটি আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর একটি পাইলট প্রকল্প, যা পরিবেশবান্ধব, পানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এবং সময় ও শ্রম সাশ্রয়ের দিক থেকেও কার্যকর। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ট্রেন ওয়াশিং প্রক্রিয়া হবে স্বয়ংক্রিয়, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে রেলওয়ের যাত্রীসেবা উন্নয়নে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। সরবরাহকারীর অনুরোধে তিনজন কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন, প্লান্টের অভ্যন্তরীণ ক্লিনিং সিস্টেম সংযোজন করা সম্ভব কি না তা যাচাই করতে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই সংযোজন করলে ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেত এবং প্রকল্পের বিদ্যমান কাঠামোতে সেটি বাস্তবায়ন সম্ভব ছিল না।
এই প্রকল্পের শেষ পর্যায়ের পরিচালক ছিলেন ফকির মো. মহিউদ্দিন। তিনি জানান, “এ প্রকল্পে আমার আগে আরও চারজন প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। আমি যোগদানের আগেই প্লান্ট দুটি স্থাপন সম্পন্ন হয়েছিল। আমি মূলত কমিশনিং ও ওয়ারেন্টি বিষয়গুলো তদারকি করি।” তিনি আরও বলেন, “আমরা সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন প্লান্ট স্থাপন করেছি। এখনো দুটি প্লান্ট সম্পূর্ণ সচল আছে। তবে ক্লিনিং ম্যাটেরিয়াল দ্রুত ক্রয় না করলে ভবিষ্যতে প্লান্ট ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।” জনাব মহিউদ্দিনের মতে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি রেল প্রশাসনের দীর্ঘদিনের কিছু অনিয়ম প্রকাশ্যে আনেন—যেমন ১৫–২০ বছর ধরে একই পদে কর্মরত থাকা, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় রেলভবনে স্থায়ীভাবে চাকরি করা, জুনিয়র হয়েও সিনিয়রদের ছাড়িয়ে পদোন্নতি পাওয়া, এবং পদায়নে বৈষম্য ইত্যাদি। তিনি বলেন, “আমার এসব বক্তব্য প্রশাসনের অস্বস্তির কারণ হয়। কিছু পরিবর্তন আনলেও সুবিধাভোগীরা আবার পুরনো অবস্থানে ফিরে যায়।”
রেলওয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্পে কিছু সমস্যা থাকতেই পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, এখন সবকিছুই দুর্নীতির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়। এতে সৎ ও পেশাদার কর্মকর্তারা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।” আরেকজন কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে কিছু ব্যক্তি রেলওয়ের ভাবমূর্তি নষ্টের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।” নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ফকির মো. মহিউদ্দিন ২০তম বিসিএস ব্যাচের প্রথম সারির মেধাবী কর্মকর্তা। তাকে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) পদে পদায়নের চিন্তাভাবনা চলছিল। তবে প্রশাসনের ভেতরে কিছু পক্ষ এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে, যা থেকে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। রেলওয়ে বিশেষজ্ঞদের মতে, “যদি প্রকৃত দুর্নীতি থাকে, তা তদন্ত করে কমিশন ব্যবস্থা নেবে — এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু দুর্নীতি প্রমাণের আগেই কাউকে হেয় করা সাংবাদিকতার নৈতিকতার পরিপন্থী।” তাঁরা আরও বলেন, “গুজব বা অসম্পূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে কর্মকর্তা বা প্রতিষ্ঠানকে সামাজিকভাবে হেয় করলে ভবিষ্যতে কেউ দায়িত্ব নিতে সাহস করবে না। এটি রেলওয়ের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার জন্য বড় বাধা।” ওয়াশিং প্ল্যান্ট প্রকল্পের অভিযোগগুলো পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, এগুলোর বেশিরভাগই তথ্যবিকৃত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রকল্পটি প্রযুক্তিনির্ভর, আধুনিক এবং রেলওয়ের ভবিষ্যৎ রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বস্তুনিষ্ঠতা, তথ্যনির্ভর অনুসন্ধান ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা ছাড়া রেলওয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা শুধু অনৈতিকই নয়, জাতীয় স্বার্থবিরোধীও।