বে-দখল হচ্ছে পূর্বাঞ্চলের রেলওয়ে ভূমি
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৬ মার্চ, ২০২৩, 1:52 PM

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৬ মার্চ, ২০২৩, 1:52 PM

বে-দখল হচ্ছে পূর্বাঞ্চলের রেলওয়ে ভূমি
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ একটি সেবামুলক প্রতিষ্ঠানক। বাংলাদেশ রেলওয়েকে রাজ্যর মধ্যে রাজ্য বলা হয়। কারণ দেশের মোট ভুমির একটি অংশের মালিকানা বাংলাদেশ রেলওয়ের। অথচ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সার্বিক ব্যবস্থাপনার পরেও রেলওয়ে ক্রমান্বয়ে লোকসানে জর্জরিত হচ্ছে। কারণ অনিয়ম দূর্নীতি।
আর এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের সম্পদ লুটপাটে দেশব্যাপী গঠিত হয়েছে কয়েকটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তাদের নিয়ন্ত্রণের অভিনব কৌশলের কারণে পুরো রেলওয়ে জিম্মি হয়ে গেছে সিন্ডিকেট চত্রুের হাতে।
এই শক্তিশালী সিন্ডিকেটের একটি পরিচালিত হয় বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলকে কেন্দ্র করে। গুটি কয়েক ব্যবসায়ী নামধারী ভূমিদস্যুর নিয়ন্ত্রণে পূর্বাঞ্চলের ভূমি ও বানিজ্যিক ইজারা কার্যক্রম। বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ বানিজ্যিক জায়গা ও সর্বোচ্চ রাজস্বের জোগান দেওয়া প্রতিটি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। এই সিন্ডিকেটকে পর্দার আড়ালে রেখে যাবতীয় সুযোগ সুবিধা দিয়ে মাফিয়া-টাইপ একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলো প্রয়োগের ক্ষেত্র তৈরি করে দেয় পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকা কিছু অসাধু কর্মকর্তারা।
অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সিন্ডিকেট তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে গুরুত্বপূর্ণ প্রায় প্রতিটি ভূমি ও বানিজ্যিক ইজারা কার্যক্রম পরিচালনা। এই তালিকায় রয়েছে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের বিশাল গাড়ি পার্কিং, স্টেশন সংলগ্ন বিশাল জায়গায় গড়ে তোলা মার্কেট, হালিশহর রেলওয়ে ট্রেনিং ইন্সটিটিউট সংলগ্ন বিশাল জায়গা, কালুরঘাট সেতু, কালুরঘাটের মুড়িংঘাট, পটিয়ার ধলঘাট, দোহাজারী, ষোলশহর, জানাআলী স্টেশন, সীতাকুণ্ড, ভাটিয়ারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুরের গুরুত্বপূর্ণ বানিজ্যিক জায়গা সমূহ উল্লেখযোগ্য।
উপরিল্লিখিত জমি এবং বানিজ্যিক ইজারার মেয়াদ শেষ হলেও ইজারাদার বার বার মেয়াদ বাড়ানোর পরে আদালতে মামলা দায়ের করে টেন্ডার কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের পার্কিং নিয়ে উচ্চ আদালতের স্থগিত করাসহ, হালিশহর, কালুরঘাট সেতু এবং কালুরঘাট মুড়িংঘাটের টেন্ডারের বৈধতা আদালতে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চলমান রয়েছে পূর্বে নিয়োগ প্রাপ্ত ইজারাদারের নিয়ন্ত্রণে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের সদ্য সাবেক একজন কর্মকর্তা বলেন, যারা টেন্ডার কার্যক্রম পরিচালনা করেন তারাই দেখিয়ে দেন আদালতের স্থগিত আদেশ নিয়ে আসার যাবতীয় বিষয়। তাহলে কিভাবে টেন্ডার কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। কর্মকর্তা আর ইজারাদার আলাদা ব্যক্তি হলেও অংশীদারত্বের ভিত্তিতে সবাই সমান সুযোগ সুবিধা পায়।
পুর্বাঞ্চল রেলওয়ের একরের পর একর মূল্যবান জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। অবৈধ দখলদারের পাশাপাশি নামমাত্র মূল্যে লিজের নামে একের পর এক ভূমি চলে যাচ্ছে দখলদারের হাতে।
চট্টগ্রাম নতুন রেলওয়ে স্টেশনে ১ হাজার গাড়ি ধারণক্ষমতার পার্কিংও ইজারা নিয়ে ৬ বছর ধরে দখলে রেখেছেন। চট্টগ্রাম নতুন ও পুরাতন স্টেশনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার গেস্টহাউজ। হালিশহরে অবস্থিত বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমিতে প্রায় ২৬ একর জলাশয়। সিআরবি সাত রাস্তার মোড়ে দোকান করার কথা বলে ৫০০ বর্গফুট জমি লিজ নিয়ে পাঁচ হাজার বর্গফুট দখল করে রেখেছে একটি প্রতিষ্ঠান।
এব্যাপারে জানতে চাইলে পূর্বাঞ্চলের মহা-ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যেই সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে ইজারাদারা কিছুটা কাজের গতির বাধা সৃষ্টি করেন। ফলে ইজারা কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটে। পূর্বাঞ্চলের আইন কর্মকর্তার যথেষ্ট দুর্বলতা রয়েছে বলেও জানান তিনি।