অডিট আপত্তির ভিত্তিতে রেলওয়ে মহাপরিচালকের অপসারণ বেআইনি : রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি
নিজস্ব প্রতিবেদক
৩১ জুলাই, ২০২৫, 12:04 PM

নিজস্ব প্রতিবেদক
৩১ জুলাই, ২০২৫, 12:04 PM

অডিট আপত্তির ভিত্তিতে রেলওয়ে মহাপরিচালকের অপসারণ বেআইনি : রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি
বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি রেলপথ সচিব বরাবর এক জরুরি স্মারকলিপির মাধ্যমে রেলওয়ে মহাপরিচালককে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ‘অপসারণের সিদ্ধান্ত’ প্রত্যাহারের জোর দাবি জানিয়েছে। সোসাইটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের বর্তমান মহাপরিচালক একজন অভিজ্ঞ, নিয়মিত ও বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত পেশাদার কর্মকর্তা, যাঁর মেয়াদ ২০২৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বলবৎ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে একটি সাধারণ অডিট আপত্তিকে ‘দুর্নীতির অভিযোগ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে অপসারণ প্রক্রিয়া শুরু করার পেছনে ‘প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচার ও অপারদর্শিতা’ কাজ করছে বলে উল্লেখ করা হয়।
ঘটনাপ্রবাহের পটভূমি:
স্মারকলিপিতে বলা হয়, অডিট আপত্তি মূলত একটি প্রশাসনিক পর্যবেক্ষণ যা আপিলযোগ্য ও নিস্পত্তিযোগ্য, কোনোভাবেই তা ফৌজদারি অভিযোগ নয়। এই আপত্তিকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কোনো মামলা করেনি, কিংবা কোনো আদালতের রায়ও হয়নি। অথচ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একতরফাভাবে এই আপত্তিকে ‘দুর্নীতির অভিযোগ’ বলে ব্যাখ্যা করে পদত্যাগের চাপ সৃষ্টি করছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
আইনানুগ ও সাংবিধানিক বিশ্লেষণ:
স্মারকলিপিতে আইন ও সংবিধানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে,
• সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী কোনো কর্মকর্তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে অপসারণ করা বেআইনি।
• সংবিধানের ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিক ন্যায্য বিচার ও আইনানুগ সুরক্ষার অধিকার ভোগ করেন।
• ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদ প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ ও প্রতিষ্ঠানিক স্বায়ত্তশাসনের নীতিমালার প্রতি বাধ্যবাধকতা আরোপ করে।
আন্তর্জাতিক ন্যায্যতার মানদণ্ড:
• ILO Convention 158 (Article 4) অনুযায়ী, কোনো কর্মীকে যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া বরখাস্ত করা যায় না।
• UN Administrative Justice Guidelines (1997) অনুযায়ী, প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ এবং নিরপেক্ষ পুনর্বিবেচনার অধিকার থাকতে হবে।
উচ্চ আদালতের দৃষ্টান্ত:
স্মারকলিপিতে ২০২২ সালের সেক্রেটারি, পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বনাম আবদুল কুদ্দুস মামলার (Writ No. 7265/2022) দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলা হয়,
“কোনো পূর্ণাঙ্গ তদন্ত বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছাড়াই দুর্নীতির অভিযোগে পদচ্যুতি অসাংবিধানিক এবং প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচার।”
এই প্রেক্ষাপটে রেলওয়ে মহাপরিচালকের অপসারণের প্রচেষ্টাও আদালতের স্থগিতাদেশের যোগ্য বলে দাবি করা হয়।
DG-এর প্রশাসনিক ভূমিকা ও গুরুত্ব:
রেলওয়ে মহাপরিচালক অবকাঠামো উন্নয়ন, নিরাপত্তা, আধুনিকায়ন ও নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁকে অডিট আপত্তির অজুহাতে অপসারণ করলে রেল খাতের পরিকল্পনা, প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং নেতৃত্ব কাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ:
পোষ্য সোসাইটির অভিযোগ,
• অডিট আপত্তির ভুল ব্যাখ্যা করে সেটিকে ফৌজদারি অভিযোগ হিসেবে উপস্থাপন একটি ‘প্রশাসনিক কৌশল’।
• Malafide Intention বা পূর্বপরিকল্পিত উদ্দেশ্যে পদে হস্তক্ষেপ করে সুবিধাভোগী কাউকে বসানোর চেষ্টা স্পষ্ট।
পোষ্য সোসাইটির দাবি ও সতর্ক বার্তা:
বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির পক্ষ থেকে চার দফা দাবি উত্থাপন করা হয়—
১. অভিযোগ থাকলে যথাযথ তদন্ত ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে আইনগত প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তি করতে হবে।
২. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একতরফা সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
৩. রেলওয়ের নিজস্ব নীতিনির্ধারক বা বোর্ডের সম্মতি ছাড়া মহাপরিচালক পদে হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়।
৪. প্রয়োজন হলে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে মহাপরিচালকের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করা হবে।
চূড়ান্ত ঘোষণা
বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির বলেন, “বর্তমান DG-এর বিরুদ্ধে কোনো আদালতের রায়, দুদকের মামলা বা ফৌজদারি প্রমাণ ছাড়াই অপসারণের সিদ্ধান্ত শুধু বেআইনি নয়, বরং রেলওয়ের প্রতিষ্ঠাগত স্বার্থ ও পেশাদার কাঠামোর ওপর সরাসরি আঘাত। আমরা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হব।”